২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর থেকেই ক্রমশ শক্তিক্ষয় শুরু হয়েছিল তাদের। তারপর একের পর এক নির্বাচনে গোহারা হেরে সাইনবোর্ড থেকে ভিজিটিং কার্ডে পরিণত হয়েছে তারা। কথা হচ্ছে বঙ্গ সিপিএমের। যাদের ধীরে ধীরে গ্রাস করছে অনটন। যার জেরে রাজ্যের অনেক জেলায় সর্বক্ষণের কর্মী (হোলটাইমার) নিয়োগ থমকে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে। তার মধ্যে অন্যতম কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা।
সিপিএম সূত্রের খবর, কলকাতা জেলায় শেষ বার সর্বক্ষণের কর্মী নিয়োগ হয়েছিল ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তার পর আর কাউকে নেওয়া হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনায় শেষ বার সর্বক্ষণের কর্মী নেওয়া হয়েছিল ২০১৩ সালে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলা শুধু গত বছর জেলা সম্মেলনের পর এক জনকে সর্বক্ষণের কর্মীর স্বীকৃতি দিয়েছে। তা-ও তিনি জেলা কমিটির সদস্য হওয়ার পর। অন্যান্য জেলাতেও এই একই অবস্থা বলে খবর। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও পরিস্থিতি ‘শোচনীয়’ বলে দলীয় সূত্রের বক্তব্য।
কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে আলোচনা বেশি হচ্ছে। কারণ, ওই দুই জেলারই হোলটাইমার নিয়োগে ধারাবাহিকতা ছিল। কিন্তু তারাও থমকে গিয়েছে। সিপিএম সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলাতেই সর্বক্ষণের কর্মী হওয়ার জন্য বহু তরুণ-তরুণীর আবেদনপত্র পড়ে রয়েছে। কিন্তু দল সেগুলি নিয়ে কিছু করতে পারছে না। কলকাতা জেলার সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদারের কথায়, ‘সর্বক্ষণের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্টিকে অনেক কিছু দেখতে হয়। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়টিও রয়েছে।’
২০১৫ সালে কলকাতায় প্লেনাম (সাংগঠনিক সম্মেলন) থেকে সিপিএম প্রতিটি রাজ্যকে বলেছিল, ‘ক্যাডার পলিসি’ নির্দিষ্ট করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম বিষয় ছিল, সর্বক্ষণের কর্মীদের ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘বাস্তবসম্মত’ সিদ্ধান্ত নেওয়া। ২০১৫ সালে সিপিএমের দলিলে এ বিষয়ে ‘মডেল’ হিসাবে দেখানো হয়েছিল তেলেঙ্গানা রাজ্য কমিটিকে। সেই সময়ে তেলেঙ্গানা রাজ্য কমিটি তাদের রাজ্যের সমস্ত সর্বক্ষণের কর্মীকে ১৩,৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দিত। এখন সেটা আরও বেড়েছে।
কিন্তু বাংলায়? হুগলিতে সদ্য হোলটাইমার পান মাসিক ৫,৫০০ টকা। কলকাতায় সেটা ৭,৫০০ টাকা। উত্তর ২৪ পরগনায় ৬,৫০০ টাকা। রাজ্যে সর্বক্ষণের কর্মীদের জন্য ‘অভিন্ন’ ভাতা কাঠামোও তৈরি করতে পারেনি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কেন? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ব্যাখ্যা, ‘তেলেঙ্গানায় দল কখনও সরকার চালায়নি। মন দিয়ে সংগঠন করেছে। কিন্তু এ রাজ্যে আমরা কেবল সরকারই চালিয়ে গিয়েছি। কর্মীনীতিতে নজর দেওয়ার সময় পাইনি।’
অনেকের মতে, সিপিএম সরকারে থাকার সময় সর্বক্ষণের কর্মীদের অনেকের পরিবারের লোকের সরকারি চাকরি নিশ্চিত করেছিল। যা ছিল একরকমের পুষিয়ে দেওয়ার মতো। আর এখন অনেক সর্বক্ষণের কর্মীর দিন চলছে অনটনেই। যার জন্য তাঁরা দলের নেতাদের দূরদর্শিতার অভাবকেই দায়ী করছেন। তবে এই বাজারেও হোলটাইমার হওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই শহরকেন্দ্রিক। এবং অনেকেরই পারিবারিক আর্থিক প্রতিপত্তি রয়েছে।