দেশজুড়ে বইছে নতুন বিতর্কের ঝড়। অতিসম্প্রতিই জি-২০ সম্মেলনের নৈশভোজের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতিকে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ হিসাবে উল্লেখ করার পরই মাথাচাড়া দিয়েছে এই বিতর্ক। এর আগে দেখা গিয়েছে, এর আগে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন, তখনও সরকারি বিবৃতিতে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’ হিসাবেই উল্লেখ করা হয়েছিল। আজ, প্রধানমন্ত্রী মোদীর ইন্দোনেশিয়া সফরকেও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরই জল্পনা শুরু হয়েছে, ইন্ডিয়ার নাম বদলে ভারত করার পরিকল্পনা করছে মোদী সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, ইন্ডিয়া জোটকে ভয় পেয়েই এই পদক্ষেপ করতে চাইছে কেন্দ্র। তবে কি দেশের সঙ্গে সঙ্গে নাম পরিবর্তন হবে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের নামও? পাসপোর্ট থেকে শুরু করে আধার কার্ড, ভোটার কার্ডেও নাম পরিবর্তন হবে? প্রশ্ন উঠছে এমনই। আগামী ১৮ থেকে ২২শে সেপ্টেম্বর সংসদে বিশেষ অধিবেশনের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কী কারণে এই অধিবেশন ডাকা হয়েছে, তা নিয়ে খোলসা করে কিছু জানায়নি কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, অধিবেশন ডাকার পর থেকেই জল্পনা ছিল, বিশেষ অধিবেশনে “এক দেশ, এক নির্বাচন” বিল পেশ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। এই নিয়ে তরজাও শুরু হয়। এরইমাঝে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির পাঠানো জি-২০ সম্মেলনের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতিকে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এরপরই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। জল্পনা, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে দেশের নাম স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করার জন্য বিল পেশ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধী দলগুলিও পরিকল্পনা করেছে এই বিলের বিরোধিতা করার। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বিল যদি পাশ হয়, তবে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের নাম, যেখানে ইন্ডিয়ার উল্লেখ রয়েছে, তাও বদলে যাবে? বর্তমানে ভারতকে রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া হিসাবে উল্লেখ করা হয়। যদি কেন্দ্র ইন্ডিয়ার নাম বদলে ভারত করে, তবে দেশকে কি রিপাবলিক অব ভারত বলে উল্লেখ করা হবে? পাশাপাশি সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানেই ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়ান শব্দটির উল্লেখ থাকে। তাই নাম বদল হয়ে ‘ভারত’ হলে প্রতিষ্ঠানগুলির নামও কি পরিবর্তন হয়ে যাবে? ঘনীভূত সংশয়। দেশের নাম পরিবর্তন হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ারও নাম পরিবর্তন করতে হবে। দেশের মুদ্রাতেও ইন্ডিয়া শব্দটির উল্লেখ থাকে। নাম পরিবর্তন হলে টাকা-পয়সার লেখাও বদলে যেতে পারে। অর্থাৎ, সমস্ত নোট পরিবর্তন করতে গেলে আরও ভেঙে পড়তে পারে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। আগামী কয়েক মাসে দেশের একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। দেশের নাম পরিবর্তন হলে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নামও পরিবর্তন করা হতে পারে। পাশাপাশি, নাগরিকদের পরিচয়পত্রও পরিবর্তন করতে হবে। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্টেও পরিবর্তন করতে হবে। ১৪০ কোটি নাগরিকের পরিচয়পত্র পরিবর্তনও যথেষ্ট জটিল ও খরচসাপেক্ষ বিষয়। ফলত কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। নিন্দার রোল উঠেছে একাধিক মহলে।