মসনদে বসার পর থেকেই বারবার দেশের নারী ক্ষমতায়ণ নিয়ে গালভরা প্রচার করে এসেছে মোদী সরকার। কিন্তু তার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? আদৌ কি উন্নীত হয়েছে নারীসুরক্ষা ও নিরাপত্তা? উঠেছে প্রশ্ন। বিগত ২০১৩-১৪ সালে নির্ভয়া প্রকল্প চালু করে কেন্দ্র। যার আওতায় ছিল পুলিশ হেল্পলাইন ও পরিবহণে নিরাপত্তার অঅঅসুনিশ্চিতকরণ। ওই বছর নির্ভয়া তহবিলের জন্য ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ সালে, পরপর তিন অর্থবর্ষে তা কমিয়ে ৫৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। পরবর্তী দুই অর্থ বছরে, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ সালে আরও কমিয়ে বরাদ্দ পাঁচশো কোটিতে নামিয়ে নেয় মোদী সরকার। কিন্তু বরাদ্দের সঙ্গে ব্যয়ের বিস্তর ফারাক। ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ভয়া প্রকল্পের জন্য ১২০০৮.৫ কোটি অটাকা বরাদ্দ করা হয়। যার মধ্যে মোটে ৪,৯২৩ কোটি টাকা ছাড়া হয়েছে, যার কেবল ২,৫২১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যা বরাদ্দকৃত অর্থের ২১ শতাংশ মাত্র। ২০২০-২১ সালে কেন্দ্র আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নেয়, ওয়ান স্টপ সেন্টার প্রকল্পে ১৬০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। ‘মিশন ফর প্রোটেকশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট ফর উইমেন’-এর অধীনস্থ এই প্রকল্পটি এখন মিশন শক্তি-র ‘সম্বল’ নামে নতুন একটি কর্মসূচির অধীনে রয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনেক আগে থেকে অন্যান্য নারীকল্যাণমূলক প্রকল্পের সঙ্গে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে যুক্ত করা হয়েছে, যে কারণে কোন প্রকল্পের জন্য আলাদাভাবে কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল তা আর খুঁজে বের করা সম্ভব নয়৷ ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’, ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’, ‘নারী আদালত’, ‘মহিলা পুলিশ ভলিন্টিয়ার’, এবং ‘মহিলা হেল্পলাইন’ ইত্যাদিগুলোকে মিলিয়ে সম্বলের অধীনে নিয়ে আসা হয়। ২০২১-২২ সালে সম্বলের জন্য মোট ৫৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, সেই বছরে তা থেকে ১৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয় যা বরাদ্দের প্রায় ৩১ শতাংশ। পরবর্তী বছরগুলিতে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ কমিয়ে ৫৬২ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়েছিল৷ বস্তুত, বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে এই নারীসুরক্ষা ও নারীকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। প্রতি বছর বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কমেছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অব্যবহৃত টাকার অঙ্ক। উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই নারীর প্রতি হিংসার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি মণিপুরে নারী নির্যাতনের ঘটনায় আঁতকে উঠেছে দেশ। নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও সমাজ মাধ্যমে ঘুরেছে, উত্তাল হয়েছিল দেশ। ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান তথা বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে সাতজন মহিলা কুস্তিগীরকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে, তামিলনাড়ুতে এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে, একের পর এক ঘটনা সামনে আসছে নিত্যদিন৷ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে, প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে, ২০২১ সালে হার প্রায় আট শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ২০২০ সালে হার ছিল ৫৬.৫ শতাংশ যা, ২০২১ সালে বেড়ে হয় ৬৪.৫ শতাংশ।২০২১ সালে ধর্ষণ বা গণধর্ষণ করে খুনের শিকার হয়েছে ২৯৩ জন মহিলা। নির্ভয়া এবং সম্বল-এর মতো প্রকল্পগুলো নারী নির্যাতন রোধ করার জন্যে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্রমাগত বরাদ্দ কমিয়ে, এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় না করে, প্রকল্পগুলির গুরুত্ব তলানিতে নিয়ে এসেছে মোদী সরকার। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে উঠেছে বিতর্কের ঝড়। সমালোচনায় সরব হয়েছে একাধিক মহল।