তৎপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এবার বারাণসী-কলকাতা আর্থিক করিডর (এক্সপ্রেসওয়ে) প্রকল্পের জন্য এরাজ্যের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় গতি বাড়াতে উদ্যোগী হল নবান্নের উপরমহল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই ছ’টি জেলাকে জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, ওই সড়ক এ রাজ্যের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার মধ্যে দিয়ে যাবে। সরকারি সূত্রের খবর, ২০২১ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটি গৃহীত হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে পথটি প্রবেশ করার কথা পশ্চিমবঙ্গে। অন্যান্য রাজ্যে জমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ পর্বে চলে গেলেও, এ রাজ্যে তা বেশ পিছিয়ে রয়েছে। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলিকে নবান্নের সর্বোচ্চ মহল নির্দেশ দিয়েছে, কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জমি জোগাড়ের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে হবে। কারণ, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে কেন্দ্র। শীঘ্রই অধিগ্রহণের আদেশনামা
প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন জনৈক জেলা-কর্তা। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, জমি অধিগ্রহণ এ রাজ্যে কার্যত বড় সমস্যা। কিন্তু সড়ক পরিকাঠামোয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অন্যতম শর্ত, নির্বিঘ্নে জমি জোগাড় করে দিতেই হবে রাজ্যকে। জমি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসা তৃণমূল সরকারের অন্যতম নীতিই ছিল, জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। তা হবে মানুষের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁদের পূর্ণ সম্মতির ভিত্তিতে। কিন্তু তা-ই অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সেই কারণে একাধিক সড়ক প্রকল্পে জমি জোগাড় করা ছিল কষ্টসাধ্য। যার অন্যতম বড় উদাহরণ প্রায় ৪৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক (উত্তরবঙ্গের ডালখোলা পর্যন্ত)। প্রকল্পটি দীর্ঘ দিন জমি সমস্যায় ভুগেছে। এখনও বারাসতের সন্তোষপুর থেকে নদিয়ার বড়জাগুলি পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটারে জমি সমস্যা থেকে যাওয়ায় ওই পথটিকে চার লেনের করা সম্ভব হয়নি।
এপ্রসঙ্গে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে সরকারের তরফে জমি জোগাড়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রধানত সেই কারণে সড়ক তৈরি এবং সম্প্রসারণের খাতে ২০১৮-১৯ সালে ১৫৩ কোটি থেকে এ রাজ্যের ভাগে বরাদ্দ বেড়ে ২০২২-২৩ সালে পৌঁছেছে ২৩০৬ কোটিতে। রক্ষণাবেক্ষণ খাতেও বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এই অবস্থায় কলকাতা-বারাণসী সড়ক পরিকাঠামোর মতো বড় প্রকল্পে জমি প্রশ্নে আর গড়িমসিতে রাজি নয় রাজ্য। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “ওই প্রকল্পের সঙ্গে খড়্গপুর-মোড়গ্রাম, রক্সৌল-হলদিয়া এবং গোরক্ষপুর-শিলিগুড়ির মতো আর্থিক করিডর তথা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হবে। তার সঙ্গে রাজ্যের রঘুনাথপুর-ডানকুনি, ডানকুনি-তাজপুর এবং ডানকুনি-কল্যাণী, এই তিনটি আর্থিক করিডর পরিকল্পনা-স্তরে রয়েছে। এই গোটা পরিকাঠামো বিনিয়োগ এবং শিল্প সহায়ক হবে। বাড়বে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও। রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রকল্পগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বারাণসী-কলকাতা, খড়গপুর-মোড়গ্রাম এবং রক্সৌল-হলদিয়া এক্সপ্রেসওয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুরের কাছে মেশার কথা। সেখানথেকে এক-একটি পথ যাবে এক-এক দিকে। ফলে সংশ্লিষ্ট জায়গার পরিকাঠামো এবং গুরুত্ব বহু গুণ বেড়ে যাবে বলে প্রশাসনের দাবি। কারণ, এক দিকে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি করতে আদানিদের বরাত দিয়ে দিয়েছে নবান্ন। অন্য দিকে জঙ্গলসুন্দরী নামে একটি শিল্প-প্রকল্পের পরিকল্পনাও করেছে সরকার। ফলে যোগাযোগের প্রশ্নে এই সড়ক পরিকাঠামো সহায়ক হবে। কেন্দ্রের সঙ্গে এই প্রকল্পের আলোচনাতেই রাজ্য শর্ত দিয়েছিল, বারাণসী-কলকাতা সড়ক পরিকাঠামোটি নিয়ে যাওয়া হোক জোকা-নামখানায় ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক পর্যন্ত। তাতে হুগলি নদীর উপর দিয়ে নতুন সেতুও তৈরি হবে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সেই প্রস্তাবও মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। কলকাতার সঙ্গে বাকি জেলাগুলির যাতায়াতের প্রশ্নে তা দীর্ঘস্থায়ী সুবিধা দেবে। কমবে পণ্য পরিবহণের ব্যয়ও। এই পরিকাঠামো তৈরির খরচ পুরোপুরি বহন করার কথা কেন্দ্রেরই। রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে যা সুবিধাজনক বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকরা।