প্রথম থেকেই এবার ভেল্কি দেখাচ্ছিল শীত৷ কখনও বোঝাই যাচ্ছিল না শীতকাল বলে আবার কখনও সারা রাজ্য জুড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছিল৷ এবার শীতের প্রকোপ পড়ল কাশ্মীরে৷ এমনিতেই গোটা বছরেই শীত থাকে সেখানে আর এই মরশুমে মাত্রাতিরিক্ত তুষারপাতে নাজেহাল কাশ্মীর৷
বেশ কয়েকদিন ধরে উপত্যকা জুড়েই তুষারপাত চলছিল। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে তার পরিমাণ ক্রমেই বাড়তে থাকে। রাতভর চলে সেই তুষারপাত। শনিবার সকালে গোটা কাশ্মীরই ঢেকে যায় বরফের চাদরে। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত শ্রীনগর শহরে ১০ ইঞ্চিরও বেশি বরফ পড়েছে। দু’ ফুটেরও বেশি বরফে ঢাকা পড়েছে উত্তর কাশ্মীরের গুলমার্গ। কাজিগুন্দে ১১ ইঞ্চি, কোকেরংয়ে তিন ইঞ্চি, পহেলগাঁওয়ে ১৬ ইঞ্চি এবং কুপওয়ারা জেলায় ১৭ ইঞ্চি বরফ পড়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
এই নিরবিচ্ছিন্ন তুষারপাতে বিধ্বস্ত ভূস্বর্গ। বন্ধ রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর। খোলেনি দোকানপাট, বাজারহাট। বিদ্যুৎহীন শহর। সবমিলিয়ে বিপর্যস্ত কাশ্মীরের জনজীবন। এমনকী, প্রবল তুষারপাতের কারণে সড়ক ও আকাশপথে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর। চলছে অবিরাম তুষারপাত। শ্রীনগরে ১০ ইঞ্চি পুরু বরফ জমেছে। তাপমাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে মাইনাস ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সূত্র বলছে, এবারের এই তুষারপাত বিগত কয়েকটি বছরের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে। আগামী দু’একদিনে এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি মিলছে না কাশ্মীরবাসীর। বরফ পড়ছে হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে। শৈত্যপ্রবাহ দাপট দেখাচ্ছে পাঞ্জাব-হরিয়ানাতেও।
সকাল থেকেই উড়ান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শ্রীনগর বিমানবন্দরে। রানওয়ের উপর জমাট বেঁধেছে বরফ। লাগাতার তুষারপাতে কমে গিয়েছে দৃশ্যমানতাও। সেই কারণে বিমান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত উড়ান পরিষেবা স্বাভাবিক হবে না বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিনই অবশ্য জাতীয় সড়ক, বিমানবন্দরে বরফ সরানোর কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
তুষারপাতে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশও। গতকাল সন্ধ্যা থেকেই রাজ্যের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই তুষারপাত শুরু হয়। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কেলং, স্পিতি, লাহুল জেলায় ২০ সেন্টিমিটার পুরু বরফ পড়েছে। কিন্নর জেলার কল্পাতে শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে শনিবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত বরফ পড়েছে চার সেন্টিমিটার। সবচেয়ে বেশি তুষারপাত হয়েছে গোন্ডোলা জেলার কুল্লুতে। প্রায় ১০.৫ সেন্টিমিটার বরফে ঢাকা পড়েছে এই এলাকা। তুষার-দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কাজও শুরু করেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
তুষারপাতের জেরে বন্ধ হয়ে পড়েছে শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়ক। মোটা বরফে ঢাকা এই সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে জম্মু ও কাশ্মীরের ট্রাফিক পুলিশ। এরই পাশাপাশি, মুঘল রোড, শ্রীনগর-লে জাতীয় সড়কও অবরুদ্ধ। উপত্যকার মূল দুই জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাগুলিও বরফে মোড়া। ফলে পণ্য কিংবা যাত্রী পরিবহণ পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় নিত্যসামগ্রী কাশ্মীরের কোনও শহরে পৌঁছতে পারছে না। দোকানপাট, বাজারহাট বন্ধ শ্রীনগরে। গতকাল রাত থেকে শ্রীনগরের কয়েকটি এলাকা ছাড়াও উত্তর কাশ্মীরের একটা বড় অংশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।