রায়দিঘির চিরপরিচিত ‘বাম দুর্গ’ রাধাকান্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ফুটল ঘাসফুল। হ্যাঁ, রায়দিঘি। নামটি মনে পড়লেই সবার আগে যে মানুষের মুখটা ভেসে ওঠে, তিনি হলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সুন্দরবনের সিপিআই(এম) নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর দাপট ও নেতৃত্বে একদা রায়দিঘি হয়ে উঠেছিল বামেদের দুর্গ। কিন্তু পরিবর্তনের ঝড়ে তার পতন ঘটে গত ২০১১ সালেই। সেই বছরের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি রায়দিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের কাছে হেরে যান কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তবে পরাজয়ের পরেও রাধাকান্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বিন্দুমাত্র ফিকে হয়নি লাল। ৩৪ বছরের শাসনকালে তো বটেই, তৃণমূলের জমানাতেও এক দশক ধরে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় ছিল বামেরা। কিন্তু এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই গ্রাম পঞ্চায়েতে তথা রায়দিঘির মাটিতে থাকা শেষ বাম দুর্গেরও পতন ঘটে যায়। আর মঙ্গলবার সেই গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪৪ বছর বাদে গঠিত হল অ-বাম বোর্ড, যার নেতৃত্বে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ডহারবার মহকুমার মথুরাপুর-২ ব্লকে রয়েছে রাধাকান্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। একসময় এই মথুরাপুর-২ ব্লক ছিল কংগ্রেস ও এসএইসিআই’র শক্ত ঘাঁটি। রাধাকান্তপুর ছিল এসইউসিআই ও কংগ্রেসের দুর্গ। কিন্তু বাম জমানার সূচনার মুখেই পতন ঘটেছিল সেই দুর্গের। ক্ষমতায় এসেছিল বামেরা। তারপর টানা ৪৪ বছর তাঁরা এই গ্রামে রাজত্ব করেছে। তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় এলেও এই গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১৩ ও ২০১৮ সালের দুটি পঞ্চায়েত নির্বাচনেই জয়ী হয়েছিল বামেরা। এসইউসিআই ও সিপিআই(এম) পালা করে শাসন করেছে এই গ্রাম পঞ্চায়েতে। এবারে তাই এই গ্রাম পঞ্চায়েতে বামদুর্গের পতন ঘটাতে মুখিয়ে ছিল তৃণমূল। সেই লড়াইয়ে তৃণমূলকে এগিয়ে দিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা একের পর এক আর্থসামাজিক প্রকল্প। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষকবন্ধু, জয় বাংলা, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথীর মতো প্রকল্প ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষের মন পরিবর্তনে সক্ষম হয়। ভোটের ফল বার হতে দেখা যায়, ৪৪ বছর বাদে ধরাশায়ী বামেরা। এবারের ভোটের ফল বার হতে দেখা যায়, রাধাকান্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ১০টি আসন। বিরোধী সিপিআই(এম) পেয়েছে ৫টি আসন। বিজেপি ও এসইউসিআই একটি করে আসন পেয়েছে। নেতৃত্বে স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল। নতুন বোর্ডের প্রধান হয়েছেন দেবযানী হালদার। বাবুর আলি বৈদ্য পেয়েছেন উপপ্রধানের দায়িত্ব।