সারা বাংলাজুড়ে কৃষকদের স্বার্থে এবার তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টন ধান কেনা হয়েছে। তাই রেশন সরবরাহ, মিড ডে মিল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত চাল সরকারের কাছে আছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের নিজস্ব রেশন প্রকল্পের গ্রাহকদের জন্য আগামী দিনে আরও চাল প্রয়োজন। তাই দ্রুত ধান কেনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে রাজ্যের খাদ্য দফতর থেকে নবান্ন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল খোলা বাজার থেকে ওই বাড়তি চাল কেন হোক। কিন্তু তাতে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি উল্টে নির্দেশ দেন, চাষীদের কাছ থেকে বাড়তি দামে বাড়তি চাল কেনা হোক। তার জন্য কৃষক পিছু ধান কেনার উর্ধ্বমাত্রাও বাড়ানোর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশ মেনেই এবার বিজ্ঞপ্তি দিল রাজ্যের খাদ্য দফতর। তাতে জানানো হয়েছে, এবার থেকে একজন চাষির কাছ থেকে ৪৫ কুইন্টালের জায়গায় সর্বোচ্চ মোট ৯০ কুইন্টাল ধান কেনা যাবে এবং চলতি মরশুমে স্থায়ী ক্রয় কেন্দ্রে কৃষকরা প্রতি কুইন্টাল ধান ২,২০৩ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ২০ টাকা বোনাস হিসেবে সরকার দেবে। অস্থায়ী শিবিরে ধান কেনা হবে কুইন্টাল পিছু ২১৮৩ টাকায়। এই বর্ধিত দাম কার্যকর হবে এখন থেকেই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার ‘ওপেন সেল স্কিম’-এ রাজ্য সরকারকে চাল বিক্রি করতে রাজি নয়। এই অবস্থায় রেশন ব্যবস্থা চালাতে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার গতি বাড়াতে উদ্যোগী হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যদিও রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যে প্রায় ৫০ লক্ষ টন ধান রাজ্য সরকার কিনে ফেলেছে। কিন্ত এপ্রিল মাসের পর থেকে এই কাজ কার্যত থমকে আছে বিভিন্ন কারণে। এই পরিস্থিতিতে ধান কেনার প্রক্রিয়ায় যুক্ত সরকারি সংস্থাগুলিকে রাজ্যের খাদ্য দফতর নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে ধান কেনার জন্য গ্রামগুলিতে অস্থায়ী শিবির খুলতে হবে। চালু করতে হবে ভ্রাম্যমাণ শিবিরও। আর সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে নির্দেশ আসার পরেই। শুধু তাই নয়, দ্রুত বেশি পরিমাণে ধান কিনতে নিয়মও কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। ৪৫ কুইন্টালের জায়গায় এক একজন কৃষকের কাছ থেকে ৯০ কুইন্টাল করে ধান কেনা যাবে এবং ধান বিক্রির জন্য আসা কৃষকের ‘আধার নম্বর বায়োমেট্রিক স্ক্যানিং’য়ের মাধ্যমে যাচাই আর বাধ্যতামূলক থাকছে না। খরিফ মরশুমের গোড়ার দিকে যেভাবে ধান কেনা হচ্ছিল, কেনা যাবে ঠিক সেভাবেই।
পাশাপাশি, আগামী খরিফ মরশুমের জন্য, যা অক্টোবর থেকে শুরু হবে, কেন্দ্রীয় সরকার কুইন্টাল প্রতি ২১৮৩ টাকা নূন্যতম মূল্য ধার্য করেছে। চলতি খরিফ মরশুমে ১৪৩ টাকা দাম বেড়েছে ধানের। রাজ্যের খাদ্য দফতর এই দামে এখন থেকে ধান কেনার জন্য নবান্নের অনুমোদন চেয়েছিল। সেই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন যে, স্থায়ী ক্রয় কেন্দ্রে কৃষকরা প্রতি কুইন্টাল ধান ২,২০৩ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ২০ টাকা বোনাস হিসেবে সরকার দেবে। অস্থায়ী শিবিরে ধান কেনা হবে কুইন্টাল পিছু ২১৮৩ টাকায়। এদিন সেইরকমই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে খাদ্য দফতর। চলতি মরশুমে রাজ্য সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগৃহীত হয়েছে বলে খবর। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ধানের গুণগত মান নিয়ে কোনও সমস্যা থাকলে কৃষকরা ১৮০০ ৩৪৫ ৫৫০৫ টোল ফ্রি নম্বর এবং ১৯৬৭ নম্বরে ফোন করে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। দফতরের পোর্টালে যে কৃষকদের নাম নথিভুক্ত করা আছে তাঁর জেলার যে কোনও ধান ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারবেন। যাঁদের নাম তালিকায় নেই, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, জমি সংক্রান্ত নথি এবং ব্যাংকের পাশবুক দিলেই নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন তাঁরা।