একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সুদিন যেন বিলকুল উধাও বঙ্গ গেরুয়াশিবিরে। সময় যত গড়িয়েছে, ততই প্রকাশ্যে এসেছে সংগঠনের বেহাল দশা। দল ছেড়েছেন একাধিক নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক। ভোটাররাও মুখ ফিরিয়েছেন। একের পর এক নির্বাচনে নিষ্প্রভ থেকে গিয়েছে বিজেপি। আর এবারের পঞ্চায়েত ভোটেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিস্তৃত গ্রাম বাংলাজুড়ে একেবারেই দাগ কাটতে পারেনি গেরুয়াশিবির। নিজেদের গড় হিসেবে দাবি করা জঙ্গলমহল এবং উত্তরবঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়েছে তারা। একুশের হারের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রোষের মুখে পড়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। আর এবার কি বলির পাঁঠা হতে চলেছেন শুভেন্দু? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। সাংসদ দিলীপ ঘোষ, পাশাপাশি শান্তনু ঠাকুর, নিশীথ প্রামাণিক, জর্ন বার্লার মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও নিজেদের বাড়ির এলাকায় জিততে পারেননি। ভরাডুবির সঙ্গেহসঙ্গেই বাংলার বিজেপি নেতারা হিংসা-সন্ত্রাসের তত্ত্ব সামনে এনেছেন। কিন্তু দিল্লীর নেতারা এই তত্ত্বকে আর বিশেষ আমল দিতে রাজি নন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে কার্যত বেআব্রু হয়ে গিয়েছে বাংলায় বিজেপির তথৈবচ সংগঠন। তবে কি এবার শুভেন্দুর ডানা ছাঁটতে চলেছে তারা? তেমন সম্ভাবনা কথাই শোনা যাচ্ছে কান পাতলে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বিজেপির বক্তব্য অনুযায়ী সংগঠনের করুণ অবস্থা ঢাকতেই বাংলার গেরুয়া-নেতারা সন্ত্রাসের তত্ত্ব হাজির করছেন। দলের অন্দরে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরই বুথ সংগঠনের প্রকৃত হাল জানতে মরিয়া বিজেপি। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন একেবারে শান্তিপূর্ণ হলে কত আসনে জয় পেত বিজেপি? এমনই প্রশ্ন করা হয়েছে সুকান্ত মজুমদারকে। সাংগঠনিক রিপোর্টের সঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতির উত্তর মিলিয়ে দেখবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের এক বছরও বাকি নেই। তার আগে এহেন ফলাফলে দুশ্চিন্তা বেড়েছে বিজেপির, বাদল অধিবেশন চলাকালীন দিল্লীতে বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে জরুরি বৈঠক করতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাথমিক ট্রেন্ড সামনে আসতেই, পরাজয়ের প্রাথমিক কারণ ব্যাখ্যা করে দ্রুত দিল্লীতে পাঠান দলের বঙ্গ নেতারা। সন্ত্রাসকে হারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই উত্তরে বেজায় অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই বাংলায় দলের বুথ সংগঠন কতটা শক্তিশালী, এবার তা বিশদে যাচাই করতে চাইছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পঞ্চায়েতে এই ফলাফলের পর মনে করা হচ্ছে, বাংলায় জেলা স্তরে ব্যাপক সাংগঠনিক রদবদল হতে চলেছে। নির্দেশ দেবেন দলের শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় বিজেপি মুখ রক্ষা করতে, এবার আসরে নামাতে পারে এনআইএ-কে। এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।