প্রতিশ্রুতি রাখল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মাত্র মাসদেড়েক আগেই উড়িষ্যার বালেশ্বরের কাছে বাহানাগা বাজার স্টেশনে এক মর্মান্তিক ও ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল হাওড়ার শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সেই দুর্ঘটনায় সরকারি হিসাবে প্রাণ হারান ২৯৪ জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বাংলার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার পরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, নিহতদের পরিবারের এজন করে সদস্যকে চাকরি দেবে রাজ্য সরকার। সেই প্রতিশ্রুতি মেনে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া মিটতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া মহকুমার খেজুরির দুই গৃহবধূকে সরকারি চাকরি প্রদান করা হল।
প্রসঙ্গত, উক্ত দুই মহিলার নাম নিবেদিতা রায় প্রধান ও উমা গিরি। জানা গিয়েছে, নিবেদিতা রায় প্রধান হলেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহত শঙ্কর প্রধানের স্ত্রী। আর উমা গিরি হলেন নিহত ভোলানাথ গিরির স্ত্রী। নিবেদিতার একটি তিন বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে। অন্যদিকে উমা গিরির রয়েছে চার বছরের কন্যাসন্তান। রাজ্য সরকার নিবেদিতা ও উমাকে রাজ্য পুলিশের হোমগার্ডের চাকরির দিয়েছে। এই চাকরিই তাঁদের আবারও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দু’জনেই জানিয়েছেন, সন্তানের জন্য তাঁদের আগামী দিনে অনেক লড়াই করতে হবে। সেই লড়াইয়ে রাজ্য সরকারের দেওয়া চাকরি তাঁদের অনেকটাই আলো দেখিয়েছে। সেই কারণে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরির বোগা গ্রামের শঙ্কর প্রধান, সুমন প্রধান, নন্দন প্রধান, ভোলানাথ গিরি ও পাশের দক্ষিণ শ্যামপুর গ্রামের রাজীব ডাকুয়ার।
উল্লেখ্য, এদিন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মৃতদের আত্মীয়কে পুলিশের হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্র ও পাঁচ লক্ষ টাকার চেকও তুলে দেওয়া হয়। সেই চাকরির সূত্রে ট্রেনিংও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ট্রেনিং ৪২ দিন ধরে চলবে। সুমন প্রধান, নন্দন প্রধান ও রাজীব ডাকুয়া বিবাহিত না হওয়ায় তাঁদের দাদারা এই হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন। নিবেদিতা ও উমার ক্ষেত্রেও ৪২ দিনের ট্রেনিং থাকছে। তারপর আশেপাশের কোনও থানায় তাঁদের কাজ দেওয়া হবে। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৪জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের নিকট আত্মীয়দের হোমগার্ডের চাকরির জন্য ট্রেনিং শুরু হয়ে গিয়েছে। খুশি ভোলানাথ গিরির বাবা অচিন্ত্যবাবু। এককালীন পাওয়া টাকা কিছুদিনের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু চাকরি হলে পুত্রবধূ তার মেয়েকে নিয়ে মাথা উঁচু করে সসম্মানে বাঁচতে পারবে বলেই আশাবাদী তিনি।