বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের রীতিনীতি অনুযায়ী আলাদা বিধি চালু আছে। বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, সম্পত্তির অধিকার-সহ কিছু বিষয়ের নিষ্পত্তি বিভিন্ন ধর্ম, জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে প্রচলিত নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশের বহুত্ববাদকে ধাক্কা দিয়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনতে চায় মোদী সরকার। যা চালু হলে সব ধর্ম, জাত ও সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য একটাই নিয়ম হবে। কিন্তু মোদী চাইলেও ২১-তম আইন কমিশনের মত ছিল, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কাঙ্ক্ষিত নয়। তার প্রয়োজনও নেই। তাদের মতে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে ফারাক থাকতেই পারে। ফারাকের অর্থ বৈষম্য নয়, বরং তা গণতন্ত্রের প্রতীক।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ২২-তম আইন কমিশন নতুন করে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার পরে মোদীও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করেছেন। কংগ্রেস, সিপিএম-সহ একাধিক দল ২১-তম আইন কমিশনের ২০১৮ সালের রিপোর্টকেই হাতিয়ার করে প্রশ্ন তুলেছে, এক বার যখন আইন কমিশন এ বিষয়ে মত দিয়েছে, তখন ফের তা নিয়ে কাঁটাছেড়া করা হচ্ছে কেন! উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলবীর সিংহ চৌহানের নেতৃত্বাধীন ২১-তম আইন কমিশনের মত ছিল, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকারের মতো পারিবারিক বিষয়ে হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিষ্টান, পার্সি, জৈন সকলের একই আইন চালু করার প্রয়োজন নেই।
পারিবারিক আইনে সংস্কার নিয়ে কমিশনের বক্তব্য ছিল, ‘সংঘাতের সমাধান ফারাক মুছে ফেলা নয়। ফারাক থাকাটাই মজবুত গণতন্ত্রের প্রতীক। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির এখন প্রয়োজন নেই। তার বদলে বৈষম্যগুলো দূর করা উচিত।’ তাদের সুপারিশ ছিল, সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের জন্য বিয়ের নথিভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক করা হোক। বিয়ের ন্যূনতম বয়স সকলের জন্য এক হোক। বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, দম্পতির মধ্যে পুনর্মিলনের সম্ভাবনা না থাকাই বিবাহবিচ্ছেদের একমাত্র কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। ধর্ম বদলে দ্বিতীয় বা বহুবিবাহ করার সুযোগ দেওয়া বন্ধ করা হোক। যে কোনও লিঙ্গের মানুষই সন্তান দত্তক নিতে পারবেন, কোনও একা পুরুষ যাতে কন্যা সন্তানকে দত্তক নিতে পারে, তার আইনি বন্দোবস্ত করা হোক।