আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের উসকে গেল ‘রাম-বাম’ জোটের তত্ত্ব। এবার মেদিনীপুরের তমলুকে জোটবদ্ধ ভাবে ভোট প্রচার করতে দেখা গেল সিপিএম ও বিজেপিকে! সিপিএম প্রার্থীর হয়ে দেওয়াল লিখলেন বিজেপি কর্মী। তমলুকের নীলকুন্ঠা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছেরাজনৈতিক চাপানউতোর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক ব্লকের নীলকুন্ঠা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গড়কিল্লা গ্রামের ৭০ নম্বর বুথ। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে ওই এলাকা সিপিএমের খাসতালুক বলেই পরিচিত। তৃণমূলের ভরা বাজারেও সিপিএমের দখলে ছিল ওই এলাকা। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমকে পরাস্ত করে ৭৩টি ভোটে জয় লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। স্বাভাবিক কারণেই নিজেদের রাজনৈতিক ভূমি পুনরুদ্ধারে ফের মরিয়া চেষ্টায় বিরোধীরা। জানা গিয়েছে, এই গড়কিল্লা বুথের মোট ভোটার সংখ্যা ৮১৩। আর সেখানেই শাসকদল অর্থাৎ তৃণমূলের প্রতীকে ভোটের ময়দানে লড়াইয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে দাঁড়িয়েছেন বর্ণালী আদক রানা। অন্যদিকে রাজ্যের শাসকদলকে পরাস্ত করতে একরকম প্রায় নজিরবিহীনভাবেই একাট্টা হয়েছে বিরোধীরা। শুধু তাই নয়, এই গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিজেপির কোনও প্রার্থী দেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে। তবে বিরোধী প্রার্থী হিসেবে এই বুথে লড়াইয়ে ময়দানে বিজেপির কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী সুলেখা পট্টনায়ক। যা ঘিরেই তুঙ্গে বিতর্ক।
পাশাপাশি, সিপিএম প্রার্থীর হয়ে দেওয়াল লিখন করছেন বিজেপিও। গড়কিল্লা এলাকাতেই দেওয়াল লিখনে প্রথমে সিপিএমের দলীয় প্রতীকের নিচে বিজেপির ব্লক এবং বিজেপির জেলা পরিষদের প্রার্থীদের নাম লেখা হয়েছে। আর সেখানেই উঠেছে প্রশ্ন! অভিযোগ, রাজ্যের শাসক শিবিরকে পরাস্ত করতে সমবায়ের ধাঁচে রাম বামের জোটবদ্ধভাবে প্রচার চালাচ্ছে। বিতর্কিত ওই বুথে সিপিএমের হয়ে ভোট প্রচার করছে বিজেপি। দেওয়াল লিখন থেকে প্রচার সব কিছুতেই চলছে সমঝোতা। যা নিয়ে রীতিমতো এলাকা জুড়ে শোরগোল পড়েছে। তৃণমূল প্রার্থী বর্ণালী আদক রানা বলেন, “শুধু দেওয়াল লিখন নয়, এখন তো দেখছি, দুই দলের নেতৃত্বরা মিলে জোটবদ্ধভাবে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। আসলে যে ওরা রাম বাম সব সময়ই একই গোষ্ঠী সেটা আরও একবার প্রমাণিত হল। নিজেদের হারানো মাটি ফিরে পেতে এখন প্রকাশ্যেই জোটবদ্ধ হয়ে প্রচার চালাচ্ছে সিপিএমও।” যদিও সিপিএমের তমলুক ব্লক নাইকুড়ি এরিয়া কমিটির সদস্য তাপস মাইতি বলেন, “সামান্য একটি বিষয় নিয়ে কেবল বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। আসলে ওই এলাকার একটি দেওয়াল লিখনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জায়গার অভাব ছিল। তাই দলের পরামর্শ না নিয়েই কেউ বা কারা আমাদের প্রার্থীর প্রতীক এঁকে নাম লিখে দিয়েছিল। তাই আমাদের দলের নীতিবিরুদ্ধ এই বিষয়টি আমরা জানতে পেরেই নিজেদের উদ্যোগে সেটিকে মুছে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও দলকে কালিমালিপ্ত করতে এমন চক্রান্ত করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রামবামের জোট অপ্রাসঙ্গিক।” বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরাসরি সিপিএমকে সমর্থন নয়।” এবিষয়ে বাম-বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন কুমার মহাপাত্র। “আমরা এতদিন যেটা বলে আসছিলাম আজ সেটা প্রকাশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। প্রকাশ্যেই বিজেপি এবং সিপিএম জোটবদ্ধভাবে দেওয়াল লিখছে”, জানিয়েছেন সৌমেনবাবু।