পুরোদস্তুর শিল্পী তিনি। সংসার চালান শীতের নকশি কাঁথা, বালাপোষ বুনে। বছরভর এলাকার বাড়ি বাড়ি পুরনো কাপড় চাইতে যান। আর এবার ভোটের নেমেছেন ভোটের ময়দানে। তিনি কুণ্ডলা পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান তাপসী হাওলাদার। নিমপুরের বাসিন্দাদের কাছে যাঁর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় সুপরিচিত। নিমপুর গ্রামের ছোট্ট একটা টালির ঘরে থাকেন তাপসী। পাঁচ বছর উপপ্রধান, নিজের একটা আবাস যোজনার ঘর নেই। নিজের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আছে। তবে সরকারি প্রকল্পের কোনও বাড়তি সুবিধা তাঁর ঘরে মেলেনি। এখনও টালির চালায় চ্যালা কাঠ ঠেলে সকালের রান্না করেই বেরিয়ে পড়তে হয়। বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুরনো কাপড় চেয়ে আনেন। তার ভিতরে তুলো ভরে সুতোর বুনোটে বালাপোষ তৈরি করেন। আর না হলে পঞ্চায়েতের কাজে এলাকায় খোঁজ নিতে বের হন। সিউড়ির কচুজোড়ের মেয়ে তাপসী ১৪ বছর আগে নিমপুরে আসেন। বাপের বাড়ি থেকেই হাতের সেলাই আর লড়াই করার পাঠ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসা। পাঁচ বছর শ্মশান ঘাট, রাস্তা, আলো,দুর্গা-শিবমন্দির, জলাধার, সোলার আলো সব করেছেন উপপ্রধানের দায়িত্বে থেকে। দুর্নীতি দূর অস্ত, তাঁর কাজ আর আন্তরিকতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন না।
তাপসী জানিয়েছেন, “স্বামী উত্তম হাওলাদার পার্টি কর্মী। তাকে সাহায্য করতেই তার সঙ্গ দিতেই তৃণমূল করা। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবেসে দলে আসা। উপপ্রধান হয়ে একটা কাদায় গাঁথা ঘরের মাথায় ছাদ দিতে পেরেছি। তাও ধার করে।” ‘মেঘনাদ’ নামে একটা স্বনির্ভর দল চালিয়ে সেখান থেকে ঋণ নিয়ে তাই দিয়েই সংসার চালান। শাশুড়ি কমলাদেবী বলেন, “হাতের কাজ না করলে খাব কী? ছেলে তো ভোলেভালা। পার্টি ছাড়া কিছু বোঝে না। যখন ওর ১২বছর বয়স তখন থেকেই রক্তদান করে। প্রতিমাসে রক্ত দেয়।” তাপসী এও বলেন, “এই এলাকায় এমন কোনও অসুস্থ নেই যাঁকে রক্ত দেননি স্বামী। তিনি সমাজসেবী।” উল্লেখ্য গতবারেও ৭ নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন। এবারেও সেই আসনে ঘাসফুল শিবিরের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি।