রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘোষণার সময় থেকেই চিল চিৎকার জুড়েছে বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, শাসক দল তাঁদের প্রার্থীদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে, মনোনয়ন দিতে দিচ্ছে না, জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই সব কিছুকেই কার্যত ধুয়ে দিল নির্বাচনী পরিসংখ্যান।
পরিসংখ্যান কার্যত বলে দিচ্ছে বিরোধীদের তোলা অভিযোগগুলি কতটা সারবত্তাহীণ। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বলে দিচ্ছে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক বেশি আসনে লড়ছে বিরোধী দলের প্রার্থীরা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৃণমূল ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিল। ভোট হয়েছিল ৬৬ শতাংশ আসনে। কিন্তু এবার তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে মাত্র ১০ শতাংশ আসনে। ভোট হচ্ছে ৯০ শতাংশ আসনে। আর ছবিটাই বলে দিচ্ছে বিরোধীদের অভিযোগ কতটা সারবত্তাহীণ।
কমিশনের তথ্য বলছে এবার রাজ্যের ২২টি জেলায় পঞ্চায়েতের ভোট হচ্ছে। এই ২২টি জেলার মধ্যে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে জেলা পরিষদ নেই। বাকি ২০টি জেলায় তা আছে। সেই জেলা পরিষদে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে মাত্র ৮টি আসনে। বাকি ৯২০টি জেলা পরিষদের আসনে কিন্তু ভোট হচ্ছে। আবার পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ৩৪৩টি ব্লকের মোট ৯ হাজার ২১৭টি আসনের মধ্যে ৭৫৯টিতে লড়াই হচ্ছে না। কেননা সেখানে বিনা প্রতিদ্বমদ্বিতায় জয় এসে গিয়েছে। আবার রাজ্যের ৩ হাজার ৩১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩ হাজার ২৮৩টি আসনের মধ্যে লড়াই নেই মাত্র ৬,২৩৮টিতে। বাকি আসনে কিন্তু ভোট হচ্ছে। সার্বিক ভাবে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রায় ৭৪ হাজার আসনের মধ্যে ৯০ শতাংশ আসনেই কিন্তু ভোট হচ্ছে। কেননা সেখানে লড়াইয়ের ময়দানে থাকছে বিরোধীরা। আর এখানেই তাই কার্যত বোঝা যাচ্ছে বিরোধীদের অভিযোগ কতটা সারবত্তাহীণ।
শুধু তাই নয়, রাজ্যের নির্বাচনী ইতিহাস বলছে, এর আগে বাংলার বুকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এত বেশি সংখ্যক আসনে কোনওদিন লড়াই হয়নি। কিছুদিন আগেই কাকদ্বীপে শেষ হয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসংযোগ যাত্রা। সেই কাকদ্বীপের সভায় দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেছিলেন, বামেরা আমজনতার যে গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিল তা তৃণমূল আমজনতাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। অভিষেকের এই দাবি যে মিথ্যা নয় সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান। পঞ্চায়েত ভোটের ইতিহাসে কখনও এত কম সংখ্যক আসনের ক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়-পরাজয়ের হিসাব এর আগে কখনই হয়নি। বিরোধীরা কার্যত একত্র হয়ে এবার প্রায় ৯০ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছে। তার পরেও মিথ্যার প্রচার চালিয়ে যাছে তাঁরা।