সম্প্রতি ফুটবলবিশ্বে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে বর্ণবৈষ্যমের করাল ছায়া। যা ঘিরে তৈরি হয়েছে তুমুল শোরগোল। নিন্দায় সরব হয়েছেন অনেকেই। এবার বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে অভিনব উপায়ে প্রতিবাদ জানাল ব্রাজিলের ফুটবল দল। শনিবার রাতে গিনির বিরুদ্ধে প্রদর্শনী ম্যাচের প্রথমার্ধে চিরপরিচিত হলুদ জার্সির পরিবর্তে আপাদমস্তক কালো জার্সি পরে নামল সেলেকাওরা। দলের ফুটবলার ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে ক’দিন আগে যেভাবে বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলকে ফের হলুদ জার্সিতে দেখা গিয়েছে। এদিন গিনির বিরুদ্ধে স্পেনের এস্প্যানিয়লে প্রদর্শনী ম্যাচে নেমেছিল ব্রাজিল। তার আগেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্রাজিল জানিয়ে দেয়, প্রথমার্ধে কালো জার্সি পরে নামবে তারা। ম্যাচের আগেই বর্ণবিদ্বেষের আরও একটি ঘটনা ঘটে যায়। ভিনিসিয়াসের বন্ধু এবং পরামর্শদাতা ফিলিপ সিলভেরা যখন ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে ঢুকছিলেন, তখন এক নিরাপত্তারক্ষী তাঁর দিকে একটি কলা দেখিয়ে বলেন, “তোমাদের বিরুদ্ধে এটাই আমার অস্ত্র।”
প্রসঙ্গত, এরপরেই ব্রাজিলীয় ফুটবল সংস্থা কড়া বিবৃতি জারি করে লেখে, “বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবেই। এই অপরাধ গোটা বিশ্বে বন্ধ হওয়া দরকার। সেই কারণেই প্রথমার্ধে কালো জার্সি পরে খেলেছি। আজ আবার এক অপরাধীকে প্রকাশ্যে ধরে ফেলেছি আমরা।” ব্রাজিল জানিয়েছে, এই বিষয়ে একটি সেমিনার হয়েছে এবং ৬০ ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছে ফুটবলারদের সঙ্গে নিয়মিত এ ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্যে। শুধু জার্সিই নয়, ব্রাজিলের সাজঘর এবং মাঠে ঢোকার টানেল, সবেতেই ছিল কালো রঙের ছোঁয়া। ম্যাচের আগে দু’দল একটি ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে, যাতে লেখা ছিল, “বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে কোনও রকম খেলা নয়।” অতীতে ব্রাজিলের তৃতীয় জার্সির রং কালো রাখা হলেও সেই জার্সি পরে কোনও দিন ম্যাচ খেলেনি তারা। শনিবারের ম্যাচ সে দিক থেকে ব্যতিক্রমী। শনিবারের ম্যাচে প্রথমার্ধে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন জোয়েলিনটন এবং রদ্রিগো। গিনির সেরহু গুইরাসি সমতা ফেরালেও দ্বিতীয়ার্ধে এদের মিলিটাও এবং ভিনিসিয়াস গোল করেন। ৪-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে সেলেকাও-বাহিনী।
উল্লেখ্য, গত ২১শে মে লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়া বনাম রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচ চলাকালীন ভ্যালেন্সিয়ার সমর্কদের কুরুচিকর বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের শিকার হন রিয়াল মাদ্রিদের উইঙ্গার ভিনিসিয়াস। তাঁর গায়ের রঙ নিয়ে কটাক্ষ করা হয়। ডাকা হয় ‘বাঁদর’ বলে। তীব্র প্রতিবাদ করেন ভিনি। গোলের পিছনে থাকা দুই সমর্থককে চিহ্নিত করে দেন। রিয়ালের তরফে খেলা সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়। রেফারি তা মানতে চাননি। বলেন, আগে মাঠের স্পিকারে সমর্থকদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হবে। তার পরেও একই ঘটনা ঘটলে খেলা বন্ধ করা হবে। কিন্তু ঘটনা তার পরেও থামেনি। ফলে খেলা বন্ধ রাখতে হয় সাত মিনিট। ৭০ মিনিটের মাথায় রেফারিকে ডেকে এক ভ্যালেন্সিয়া সমর্থককে চিহ্নিত করে দেন ভিনিসিয়াস। দুই দলের ফুটবলাররা সমর্থকদের শান্ত করানোর চেষ্টা করেন। তাতেও লাভ হয়নি। পুলিশ দর্শকাসনে গিয়ে সমর্থকদের শান্ত করে। স্টেডিয়ামের স্পিকারেও বার্তা শোনানো হয়। খেলা শুরুর পরেই ভ্যালেন্সিয়ার এক ফুটবলারের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখেন ভিনিসিয়াস। ম্যাচের পর সমাজমাধ্যমে আবেগী বার্তা দেন ব্রাজিলীয় ফরওয়ার্ড। “প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার নয়। লা লিগায় বর্ণবিদ্বেষ খুব স্বাভাবিক। প্রতিযোগিতার আয়োজকরা, ফুটবল সংস্থাও সেটাই মনে করে। বিপক্ষ দল এতে আরও উৎসাহ পায়। যে লিগে রোনাল্ডিনহো, রোনাল্ডো, ক্রিশ্চিয়ানো (রোনাল্ডো) এবং মেসির মতো ফুটবলাররা খেলে গিয়েছে, তা এখন বর্ণবিদ্বেষীদের দখলে চলে গিয়েছে। কিন্তু আমি শক্তিশালী এবং শেষ পর্যন্ত বর্ণবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে লড়াই করব”, ইনস্টাগ্রামে লেখেন ভিনি।