গত ১৯ ডিসেম্বরই নবান্নে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকদের চেক কেটে হাতে হাতে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার। এরপর প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে খাদ্য দফতর মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যেই তৈরি করেছে ৫০ হাজারেরও বেশি চেক। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের মান্যতা দিতে আজ, শনিবার থেকে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলায় কৃষকদের স্বার্থে চালু হল ‘ধান দিন চেক নিন’ পদ্ধতি।
শুক্রবার খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ খাদ্য দফতরের প্রধান সচিব প্রতিটি জেলার জেলাশাসকদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা আনতে এবং সেই কাজ আরও দ্রুতগামী করতেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। অর্থাৎ এখন থেকে ধান কেনার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের প্রাপ্য অর্থ চেকের মাধ্যমে দেওয়া হবে।
এ বছরও খাদ্য দফতরের উদ্যোগে কৃষি মান্ডির মাধ্যমে ধান কেনা শুরু হয়। তার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
কৃষকদের কাছ থেকে কুইন্টাল প্রতি ১৭৫০ টাকা দরে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সঙ্গে পরিবহণ খরচ বাবদ কৃষকদের কুইন্টাল প্রতি আরও ২০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বর মাস থেকে ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ধান কিনতে গিয়ে দেখা যায় সরকারি নিয়মের ফাঁক গলে একশ্রেণির দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে একশ্রেণির কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসতেই তিনি তড়িঘড়ি এ ব্যাপারে নতুন ভাবনা শুরু করেন। আগে যেখানে ধান কেনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কৃষকদের প্রাপ্য টাকা তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যেত, মুখ্যমন্ত্রীর নতুন ভাবনা অনুযায়ী এখন থেকে অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারের বদলে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষককে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রাপ্য অর্থ চেকের মাধ্যমে দেওয়া হবে। সুষ্ঠুভাবে চেক বিলির জন্য প্রত্যেকটি কৃষি মান্ডিতে সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিস থেকে ৫ জনের একটি দল নিয়োগ করা হয়েছে। আজ সকাল ৯টা থেকে রাজ্যের নির্দিষ্ট কৃষি মান্ডিগুলি এই নতুন পদ্ধতিতে ধান কিনছে।
পূর্ব বর্ধমানে এই পদ্ধতিতে ধান কেনার প্রস্তুতি চূড়ান্ত। রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ বলে পরিচিত এই জেলার ৬৮টি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধান কেনার সঙ্গে সঙ্গেই চেক দিয়ে দেওয়া হবে। যে সব চেক ইস্যু হবে সেগুলি ইতিমধ্যেই ওই সব বিক্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। কৃষক পিছু ৪৫ কুইন্টাল করে ধান কেনা হবে। সরকারি সহায়ক মূল্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ধান কেনা শুরু হয়েছে।
জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরি জানান, ১৫ দিন আগে থেকেই এই জেলায় সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে। জেলার ২১টি ব্লকে ৩৫টি ধান ক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ‘ধান দিন চেক নিন’ পদ্ধতিতে ধান কেনার প্রস্তুতিও সারা আছে। ধান ক্রয়ে রাজ্যের মধ্যে এবার সেরা হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বীরভূম জেলা জুড়ে সরকারিভাবে ধান কেনা চলছে পুরোদমে। সেখানের ১৯টি ব্লকের ২১টি কিসান মান্ডিতে সরকারিভাবে ধান কেনা হচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, ‘ধান দিন চেক নিন’ কর্মসূচীর ওই বিশেষ চেকের পাতায় ছাপানো অক্ষরে লেখা থাকবে কত টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে। ৪৫ কুইন্টাল ধানের সরকারি ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ যাতে ৪৫ কুইন্টালের বেশি ধান বিক্রি করতে না পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। ফড়েদের আটকাতে সর্বোচ্চ ধান কেনার পরিমাণ ৯০ কুইন্টাল থেকে ৪৫ কুইন্টাল করে দেওয়া হয়েছে।