নেতা-মন্ত্রীদের ভিড়ে গমগম করছে সভাস্থল। এমন সময় মঞ্চ থেকে বক্তার ঘোষণা ‘মমতার ডাকে দিল্লী চলো’। হাততালি দিয়ে সায় জানালো উপস্থিত জনতা। এরপর বন্দেমাতরম ধ্বনি উঠতে শুরু করল। গলা মেলালো প্রতিটি কর্মী সমর্থক। সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকজন লোক হাতে ঘাসফুলের পতাকা নিয়ে ভোট চাইতে বের হল। মাঠের ভিতরে তখনও হাজার হাজার মানুষ। এরই মধ্যে চতুর্দিকে আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে মঞ্চে উঠে এলেন উন্নয়নের কান্ডারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যাস, আবারও হাততালিতে ফেটে পড়ল সভাস্থল।
নাহ, এটা ঐতিহাসিক ব্রিগেড বা তৃণমূলের অন্য কোনও জনসভার বর্ণনা নয়। বর্ণিত দৃশ্যে নেই আসল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই ধারাবিবরণীটি আসলে কলকাতার ‘লোকবন্দনা অপেরার সাড়া ফেলে দেওয়া যাত্রাপালা, ‘মমতার ডাকে দিল্লী চলো’। যাত্রার মাধ্যমেই লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নেমেছে ওই যাত্রাদল। সাম্প্রদায়িক রথযাত্রা নয়, বাংলায় উন্নয়নের সুদীর্ঘ যাত্রাপথকেই তুলে ধরা হয়েছে তাদের যাত্রায়।
তবে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নয়, এই যাত্রায় বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন অরূপ বিশ্বাস, পার্থ চট্টোপাধ্যায়রাও। চেনা নেতার বেশে অচেনা এবং অনামী অভিনেতারাই নজর কাড়ছেন যাত্রার আসরে। যাত্রাটির পরিচালক উত্তম মাইতি জানান, ‘আমি প্রথম থেকেই তৃণমূলের সমর্থক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শেই চলি। আগামী লোকসভায় যাতে ৪২টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়, সেই চেষ্টাতেই আমরা আমাদের মতো করে প্রচার করছি।’
বৃহস্পতিবার কোচবিহারের পেটলায় এবং শুক্রবার শীতলখুচিতে ওই যাত্রা মঞ্চস্থ হয়েছে। যা দেখতে দু’দিনই দর্শকের ঢল নামে বলে উদ্যোক্তারা জানান। যাত্রাদলের তরফে জানানো হয়েছে, ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত একাধিক মঞ্চে টানা ওই যাত্রাপালা চলবে। এর মধ্যে ৬ জানুয়ারি কোচবিহার রাসমেলার মাঠের মঞ্চেও ওই যাত্রা পরিবেশিত হবে। তার দু’দিন পরেই ওই মাঠেই সভা করতে আসছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তরবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে যাত্রাপালার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরই। টালিগঞ্জের নামী শিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে শীতের সময়ে কোচবিহার-সহ উত্তরবঙ্গের নানা জেলায় যাত্রা করতে আসেন। এ বছর লোকসভা ভোট রয়েছে। সেই ভাবনাকে মাথায় রেখেই এমন যাত্রা তৈরি করা হয়েছে বলে যাত্রাদলের তরফে জানানো হয়েছে। তৃণমূলের নানা অনুষ্ঠানে ওই যাত্রাদলকেই ডাকা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ওই যাত্রা দেখতে পেটলায় গিয়েছিলেন কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। তিনি বলেন, ‘আমার খুব ভাল লেগেছে। প্রতিটি দৃশ্যই সুন্দর।’
কী রয়েছে ওই যাত্রায়? পরিচালক জানান, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবন। তাঁর আন্দোলন। আন্দোলন করতে গিয়ে তাঁর জখম হওয়া থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত প্রায় সমস্তটাই রয়েছে এই যাত্রাপালায়। একইসঙ্গে রয়েছে তাঁর নেতৃত্বে গোটা বাংলা জুড়ে চলা বিশাল এক উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞের কথা। বাদ যায়নি বিজেপির বিরোধিতাও।’ জানা গেছে, মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় রয়েছেন সীতা ঘোষ। কখনও মঞ্চে, কখনও বাসে বড় বড় হরফে লিখে তাই দেওয়া হয়েছে, ‘রথযাত্রা নয়, বাংলার উন্নয়নের যাত্রাপালা।’