হাম ও রুবেলার টিকাকরণ ফের প্রকাশ্যে এল রাজ্য সরকারের সাফল্য। মঙ্গলবার টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জানান, বাংলায় ২ কোটি ২৩ লক্ষ শিশুকে হাম ও রুবেলার টিকা দেওয়া হয়েছে। ৯ই জানুয়ারি থেকে টিকাকরণ শুরু হয়েছিল, শেষ হয় ৩১শে মার্চে। তার মধ্যেই রাজ্যের ৯৩ শতাংশের বেশি বাচ্চা টিকা পেয়েছে। শিশু ও কিশোরদের ক্ষেত্রে হাম এবং রুবেলা খুবই বিপজ্জনক অসুখ। সঠিক সময় চিকিৎসা করাতে না পারলে এই রোগে মৃত্যুও হতে পারে। তাই টিকা দিয়েই এই রোগগুলিকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে স্বাস্থ্যভবন। ইউনিসেফ-এর গাইডলাইন মেনে রাজ্যে জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়েছিল ‘এম আর’ টিকাকরণ কর্মসূচি। তাতে বড় সাফল্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ৯ মাস থেকে ১৫ বছর অবধি শিশুদের টিকা দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়। ৯৩ শতাংশ বাচ্চা টিকা পেয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে ১ কোটি শিশুর টিকাকরণ হয়, ত্রিশ দিনে প্রায় ২ কোটি। ৪০ দিনের মধ্যে ৯৫ শতাংশ বাচ্চাকে দুটি টিকাই দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ন’মাস থেকে ১৫ বছর বয়সি মোট ৪১ কোটি ছেলেমেয়েকে টিকাকরণের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক। সেই মতো দেশের নানা জায়গায় কর্মসূচী শুরু হয়েছে। কলকাতায় গত ৯ই জানুয়ারি থেকে টিকাকরণ কর্মসূচী শুরু হয়েছে। বাচ্চাদের যাতে সময়মতো টিকা দেওয়া হয় সে নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালাচ্ছে ইউনিসেফ। অভিজ্ঞ ডাক্তারবাবুরা বলছেন, পোলিওর মতো হাম ও রুবেলার টিকাকরণও জরুরি। হামের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িকভাবে কমে যায়। সচেতন না হলে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁচি-কাশি, পেটের গোলমাল দেখা দিতে পারে। কোনও পুরনো বা জটিল রোগ থাকলে হামের কারণে তা আরও বাড়তে পারে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রাণহানির আশঙ্কাও থেকে যায়। তাই উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, ৫ থেকে ১০ বছর বাচ্চাদের এই রোগ বেশি হয়। এবং কম বেশি বাচ্চাদের জন্মের পরেই অথবা ছয় মাসের কম বয়সের বাচ্চাদের হলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। এক্ষত্রে বাচ্চাদের দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। হামের মতোই রুবেলার সংক্রমণ হয় ভাইরাস থেকে। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে রুবেলার সংক্রমণ হলে গর্ভস্থ শিশুর জিনগত বিকৃতি হতে পারে। নবজাতকের চোখে ছানি, কানে না শোনা, মস্তিষ্ক বিকৃতি বা হার্টের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গর্ভপাত বা মৃত সন্তান প্রসব হয়ে থাকে। রুবেলায় আক্রান্ত হন গর্ভবতীরা। তার ফলে, তাঁরা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দেন। তাই সঠিক সময়ে রুবেলার টিকা দেওয়া খুব জরুরি। এত দিনের টিকাকরণের পরেও ভারতে রুবেলা নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। রোগটিকে নির্মূল করার জন্য দেশের অন্তত ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শিশুকে রুবেলার টিকা দেওয়ার প্রয়োজন বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।