হল না বিশ্বরেকর্ড। ৪৪৪ রান তাড়া করতে নেমে ২৩৪ রানেই শেষ হয়ে গেল ভারতের ইনিংস। ২০৯ রানে টিম ইন্ডিয়াকে হারিয়ে নিজেদের প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জিতে নিল অজিরা। পঞ্চম দিনে বিরাট কোহলি, অজিঙ্ক রাহানের বড় পার্টনারশিপ দেখার আশায় বুক বেঁধেছিলেন ভারতীয় দর্শকরা। কিন্তু প্রথম সেশনেই আউট হয়ে যান বিরাট ও রাহানে। ভারতের জয়ের আশা কার্যত ওখানেই শেষ হয়ে যায়। পর পর দু’বার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেও জয় অধরা রইল ভারতের। রবিবার সকালে স্কট বোলান্ডের বল বিরাটের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে পৌঁছে যায় স্লিপে। চমৎকার ক্যাচ নেন স্টিভ স্মিথ। ৪৯ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বিরাট। এরপর মাত্র দু’টি বল খেলে রবীন্দ্র জাদেজা শূন্য রানে আউট হন। আরও বিপাকে পড়ে ভারত। কিছুক্ষণ বাদে স্টার্কের বলে রাহানে আউট হতেই রোহিতদের জয়ের আশা কার্যত বিলীন হয়ে যায়। বাকি চার উইকেট দ্রুত তুলে নিতে একেবারেই সমস্যা হয়নি অজিদের।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল ভারত। তার পর থেকে আইসিসির একাধিক প্রতিযোগিতার নক আউট পর্বে উঠলেও ট্রফি জেতা হয়নি। কখনও সেমিফাইনাল, কখনও ফাইনালেই বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। বিরাটের অধিনায়কত্বে ট্রফি আসছিল না। রোহিত শর্মাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বেও ট্রফি জিততে পারল না ভারত। প্রসঙ্গত, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রথম দিন থেকেই ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের একাধিক সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। দলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে না নেওয়াটাকে বড় ভুল বলেই অভিহিত করেন একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটার ও ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞরা। টেস্টের ক্রমতালিকায় এক নম্বরে থাকা বোলার অশ্বিনকে বসিয়ে রেখেই খেলতে নামে ভারত। ওভালের সবুজ পিচ এবং মেঘলা আকাশ দেখে চার পেসার এবং এক স্পিনার নিয়ে নেমেছিল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু প্রথম দিনেই রোদ উঠে যায়। ফলত ভারতীয় পেসাররা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেননি স্টিভ স্মিথ এবং ট্র্যাভিস হেডের সামনে। তাঁদের শতরানে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৪৬৯ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম দিন ভারত অধিনায়ক রোহিত টসের পর বলেছিলেন, ‘‘অশ্বিনকে দলের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত খুব কঠিন। এত বছর ধরে ও আমাদের অনেক ম্যাচে জিতিয়েছে। কিন্তু পিচ ও আকাশের পরিস্থিতি দেখে আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’’ অশ্বিনের জায়গায় দলে নেওয়া হয় উমেশ যাদবকে। ভারতের হয়ে নতুন বলে বোলিং শুরু করেছিলেন মহম্মদ শামি ও মহম্মদ সিরাজ। প্রথমদিকে তাঁদের খেলতে সমস্যা হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের। রান আসছিল না। প্রথম ১২ ওভারে মাত্র ২৩ রান হয়। বোলিং আক্রমণে প্রথম পরিবর্তন হিসাবে আনা হয় উমেশকে। তার পরেই বদলে যায় খেলার ছবিটা। এ বারের আইপিএলে ভাল ছন্দে ছিলেন না উমেশ। ওভালেও তেমনই দেখা গেল। বলের লাইন, লেংথ ঠিক করতে পারলেন না তিনি। তাঁকে আক্রমণ করা শুরু করেন ওয়ার্নার ও লাবুশেন। উমেশের এক ওভারে চারটি চার মারেন ওয়ার্নার। রোহিতের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার দুই প্রাক্তন অধিনায়ক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি যদি রোহিতের জায়গায় থাকতেন, তা হলে অশ্বিনকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া এত সহজ হত না। অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলে থাকলে অনেক সুবিধা হয় বলেই মত মহারাজের। রোহিতের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব হন রিকি পন্টিংও। ‘‘শুধু প্রথম ইনিংসের কথা ভেবে কেউ দল নির্বাচন করে না। অস্ট্রেলিয়ার দলে এত জন বাঁহাতি ব্যাটার। উইকেটে ঘাস থাকলেও অশ্বিন ওদের সমস্যায় ফেলতে পারত’’, জানিয়েছেন তিনি।
অজিদের বড় রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ব্যর্থ হন ভারতের প্রথম চার ব্যাটার। রোহিত শর্মা (১৫), শুভমন গিল (১৩), চেতেশ্বর পুজারা (১৪) এবং বিরাট কোহলি (১৪) হতাশ করলেন। ইনিংসের হাল ধরেন অজিঙ্ক রাহানে। ৮৯ রান করেন তিনি। রাহানেকে সাহায্য করেন রবীন্দ্র জাদেজা (৪৮) এবং শার্দূল ঠাকুর (৫১)। তাঁদের ব্যাটে ভর করে ভারত ২৯৬ রান করে। অস্ট্রেলিয়ার থেকে ১৭৩ রানে পিছিয়ে থেকে থামতে হয় ভারতকে। বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতের পেসাররা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। জাদেজা দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট নেন। অশ্বিনের অভাব সেই সময় টের পাচ্ছিল ভারত। পিচ ভাঙতে শুরু করে দিয়েছিল। এমন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারতেন বলে মত ক্রিকেটবোদ্ধাদের। শেষ ইনিংসে নাথান লায়নের চার উইকেট নেওয়াও প্রমাণ করে দেয়, যে অশ্বিন থাকলে হয়তো ভারত অন্যরকম খেলত। ৮ উইকেটে ২৭০ রান তুলে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেন কামিন্সরা। ভারতের সাম…