আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও নিজেদের অবস্থানে এখনও অনড় প্রতিবাদী কুস্তিগিররা। অতিসম্প্রতি কেন্দ্রকে কড়া বার্তাও দিয়েছেন প্রত্যেকে। বিজেপি সাংসদ তথা ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা ও নিগ্রহের অভিযোগ করেছেন সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া, ভিনেশ ফোগট প্রমুখ। আর তদন্তের মাঝেই এবার মিছিল করলেন ব্রিজভূষণ। আর তা গেরুয়াশিবিরের রাজনৈতিক মিছিল। সেখানে কুস্তিগিরদের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই মুখে কুলুপ আঁটলেন বিজেপি সাংসদ। রবিবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র গোন্ডায় মিছিল করেন ব্রিজভূষণ। মিছিল শেষে কুস্তিগিরদের বিক্ষোভ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বললেন, ‘‘আমি অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমি তদন্তের রিপোর্ট ও কোর্টের নির্দেশের অপেক্ষা করছি।’’ প্রসঙ্গত, গত ২৩শে এপ্রিল থেকে দিল্লীর যন্তর-মন্তরে আন্দোলন শুরু হওয়ার ৪৫ দিন পরে তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা। গত শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে বৈঠকও করেন তাঁরা। তবে সেখানে কোনও সুরাহাসূত্র বার হয়নি। সেখানে সাক্ষী-বজরংরা নিজেদের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই দাবি নিয়েই পরে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বাড়িতে আরও এক দফা বৈঠক সম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, উক্ত বৈঠকে নিজেদের পাঁচটি দাবি পেশ করেন বজরংরা। সেগুলি ছিল :
১. জাতীয় কুস্তি সংস্থায় অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।
২. সংস্থার মাথায় মহিলা প্রধান নিয়োগ করতে হবে।
৩.ব্রিজভূষণ এবং পরিবারের কেউ যেন জাতীয় কুস্তি সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকতে না পারেন।
৪. নতুন সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে থানায় যে অভিযোগ জানানো হয়েছে তা খারিজ করতে হবে।
৫. ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করতে হবে।
দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের পরে কুস্তিগিরদের কয়েকটি দাবি মেনে নেয় কেন্দ্র। ভারতীয় কুস্তি সংস্থায় একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি তৈরি করার কথা জানিয়েছেন অনুরাগ। সেই কমিটির মাথায় থাকবেন এক জন মহিলা। এই কমিটিতে এক জন প্রতিবাদী কুস্তিগিরকে থাকার অনুরোধও করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই অনুরোধ মানেননি কুস্তিগিরেরা। বজরংদের দাবি মেনে তাঁদের বিরুদ্ধে করা সব এফআইআর তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান ক্রীড়ামন্ত্রী। জাতীয় কুস্তি সংস্থার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার এবং কুস্তির সঙ্গে ব্রিজভূষণের পরিবারের কেউ যুক্ত থাকতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন অনুরাগ। কিন্তু কুস্তিগিরদের ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করার দাবি এখনও মানেনি মোদী সরকার। কুস্তি কর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ১৫ই জুনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনুরাগ। কুস্তিগিরদের বেশির ভাগ দাবিই মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। সেই কারণেই নিজেদের আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন বজরংরা। জানিয়েছেন, আপাতত ১৫ই জুন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে। কিন্তু ১৫ই জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে কুস্তিগিররা ফের আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কেন্দ্রকে।