কাটেনি ৪৮ ঘণ্টা। ভয়াবহতার রেশ এখনও তরতাজা দেশবাসীর মনে। শুক্রবার উড়িষ্যার বালেশ্বর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বাহানাগা স্টেশনের কাছে হঠাৎই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস। একটি মালগাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা খায় ট্রেনটি। লাইনচ্যুত হয় মোট ১৮টি বগি। আহত হয়েছেন প্রচুর মানুষ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। তা ৩০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলছে উদ্ধারকাজ। স্বাভাবিকভাবেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। মোদী সরকারের রেলমন্ত্রকের কড়া সমালোচনায় সরব একাধিক মহল। নিন্দায় মুখর হয়েছে বিরোধীরাও। এই দুর্ঘটনার দায় কার? সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ত্রুটি, নাকি চালকের গাফিলতি, সঠিক কারণ কী? করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নেপথ্যে কি বড়সড় কোনও গোলমাল? এবার এমনই সব প্রশ্ন তুলে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। টুইটারে একটি অডিও ক্লিপ পোস্ট করেছেন তিনি। তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। যদিও এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি ‘এখন খবর’।
ইতিমধ্যেই বালেশ্বর জেলার পুলিশ সুপার সাগরিকা নাথ আশঙ্কা করছেন, মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছুঁতে পারে। তবে তার মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুর্ঘটনার সময় চেন্নাইগামী আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সামনে সিগন্যাল ছিল মেইন লাইনের। কিন্তু পয়েন্ট লুপলাইনেই রয়ে যায়। তার জেরেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রেল সরকারিভাবে এই খবরে সিলমোহর দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে অডিয়ো ক্লিপটি টুইট করেছেন কুণাল ঘোষ। সেখানে রয়েছে দুই রেলকর্তার কথোপকথন। আর সেখান থেকেই করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নেপথ্যে বড় গোলমাল রয়েছে বলে তথ্য উঠে আসছে। প্রাথমিক তদন্তে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অডিও ক্লিপে এক রেলকর্তা আর এক রেলকর্তাকে জানান, চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে ভুল ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল মেইন লাইনের দিকে, আর পয়েন্টার ছিল লুপ লাইনের দিকে। এমনটা কেমন করে সম্ভব? প্রশ্ন করলেন আর এক রেলকর্তা। পাল্টা জবাব এল, স্থানীয় কর্মীরা কেউ গোলমাল করলেই এমন হতে পারে। দুই রেলকর্তার কথোপকথনে স্পষ্ট, সিগন্যাল–পয়েন্টারের গণ্ডগোলেই ঘটেছে দুর্ঘটনাটি।
পাশাপাশি সূত্র অনুযায়ী, বাহানাগা স্টেশনের ঢোকার মুখে আপ এবং ডাউনের পাশাপাশি দু’টি অতিরিক্ত লাইন রয়েছে।এই জোড়া লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল দু’টি মালগাড়ি। এমন জায়গায় পয়েন্টের মাধ্যমে ট্রেন ট্র্যাক বদল করে। করমণ্ডলের চালক সবুজ সিগন্যাল পেয়ে দ্রুতগতিতে ট্রেন ছোটান। কিন্তু ট্র্যাক বদলের সংযোগস্থলের পয়েন্ট থেকে যায় লুপ লাইনে। তাই দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে সজোরে ধাক্কা মারে করমণ্ডল। অডিও ক্লিপটি টুইট করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলীয় মুখপাত্র কুণাল টুইটে লেখেন, ‘”সিগনাল ছিল মেনলাইনের, পয়েন্ট ছিল লুপলাইনে। রেলের দুই কর্তার কথোপকথন। অডিয়ো’র সত্যতা যাচাই হয়নি। বিষয়টা তদন্তসাপেক্ষ। বড়সড় গোলমাল আছে রেল দুর্ঘটনার পেছনে।” গোটা বিষয়টির রহস্যজট ছাড়াতে দক্ষিণ–পূর্ব রেলের কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটিও তদন্ত করবেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। নিয়ম অনুযায়ী, পয়েন্টের আগে গতিবেগ কমাতে হয়। কিন্তু দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির গতি ১০০ কিমিরও বেশি ছিল। কেন চালক তা কমাননি? দানা বাঁধছে সংশয়। গতি কমালে লুপ লাইনে ঢুকেও এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।