শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত কার্যত নখ চিবোলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। রুদ্ধশ্বাস হয়ে রইল আইপিএলের ফাইনাল। জিততে হলে শেষ ২ বলে ১০ রান করতে হত চেন্নাইকে। তার আগের চারটি বলে মাত্র ৩ রান দিয়েছিলেন মোহিত শর্মা। দেখে মনে হচ্ছিল, চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা গুজরাত টাইটান্সের। কিন্তু এরপরেই বদলে গেল খেলার ছবি। পঞ্চম বলে ছক্কা মারলেন রবীন্দ্র জাদেজা। আর শেষ বলে চার মেরে দলকে জয় এনে দিলেন। পঞ্চম বারের জন্য ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হল চেন্নাই সুপার কিংস। পাশাপাশি, অধিনায়ক হিসেবে নিজের পঞ্চম আইপিএল খেতাব জিতলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। চেন্নাইয়ের সামনে ২১৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিলেন হার্দিকরা। বৃষ্টির দাপটে প্রায় ২ ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকলেও ছন্দ নষ্ট হয়নি চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের। ২০ ওভারের খেলা কমে দাঁড়ায় ১৫ ওভারে। লক্ষ্য কমে হয় ১৭১। সেই লক্ষ্য তাড়া করে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় তারা।
এদিন টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ধোনি। ঘরের মাঠে দাপটের সঙ্গেই ব্যাট করলেন গুজরাতের ব্যাটাররা। শুরুতে দুই ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা ও শুভমন গিল এবং তার পরে সাই সুদর্শন চেন্নাইয়ের বোলারদের দুরমুশ করলেন। শুরুতেই শুভমনকে আউট করার সুযোগ এসেছিল। দ্বিতীয় ওভারে তাঁর সহজ ক্যাচ ছাড়েন দীপক চাহার। পরের ওভারে ঋদ্ধিমানের ক্যাচ ফসকান তিনি। যদিও তা কঠিন ছিল অনেকটাই। এরপর দুই ব্যাটার হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। পাওয়ার প্লে-র সুবিধা কাজে লাগান তাঁরা। ৬ ওভারে ৬২ রান হয় গুজরাতের। দেখে মনে হচ্ছিল, আবার বড় রান করবেন শুভমন। কিন্তু তা আর হয়নি। রবীন্দ্র জাডেজার বলে ৩৯ রানের মাথায় তাঁকে স্টাম্প আউট করেন ধোনি। যদিও এরপর রানের গতি কমেনি। আরও একটি আইপিএল ফাইনালে ভাল খেললেন ঋদ্ধি। ৩৬ বলে অর্ধশতরান করেন তিনি। তার পরেই অবশ্য বড় শট মারতে গিয়ে আউট হন। এদিন নিজের জাত চেনালেন সাই সুদর্শন। তামিলনাড়ুর এই ব্যাটার নিজের ঘরের দলের বিরুদ্ধে সেরা খেলাটা খেললেন। চেন্নাইয়ের স্পিনারদের আক্রমণ শুরু করেন তিনি। ফলে চাপে পড়ে যান ধোনিরা। ৩১ বলে অর্ধশতরান করেন সুদর্শন। ক্রমশ আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল, ফাইনালে শতরান করবেন সুদর্শন। কিন্তু ৪৭ বলে ৯৬ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। হার্দিক শেষ দিকে ১২ বলে ২১ রান করেন। ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান করে গুজরাত।
চেন্নাই রান করতে নেমে প্রথম ওভারে তিন বল খেলার পরেই বৃষ্টি শুরু হয়। ক্রিকেটাররা মাঠ ছাড়েন। বন্ধ হয় খেলা। কিছু ক্ষণ পরে বৃষ্টি থেমে গেলেও খেলা শুরু করতে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরি হয়। কারণ, মাঠে বেশ কিছু জায়গায় জল জমেছিল। সেই জল সরিয়ে খেলা শুরু করতে অনেকটা সময় লেগে যায়। ফলে খেলা কমে ১৫ ওভার করার সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা। খেলা শুরু হওয়ার পরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই মারকুটে ব্যাটিং শুরু করেন চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও ডেভন কনওয়ে। তাঁরা জানতেন প্রতি ওভারে ১২ রান করে তুলতে হবে তাঁদের। খেলা ১৫ ওভারের হওয়ায় পাওয়ার প্লে-ও কমে হয় ৪ ওভার। পাওয়ার প্লে-তে ৫২ রান করেন দুই ওপেনার। বড় শট খেলা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের। ৬ ওভারে ওঠে ৭২ রান। জেতার জন্য শেষ ৯ ওভারে ৯৯ রান করতে হত চেন্নাইকে। লক্ষ্য কঠিন ছিল। ভাল বল করছিলেন গুজরাতের স্পিনার নূর আহমেদ। এক ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে চেন্নাইকে বড় ধাক্কা দেন তিনি। প্রথমে ২৬ রানের মাথায় গায়কোয়াড় ও পরে ৪৭ রানের মাথায় কনওয়েকে ফেরান তিনি। এক ওভারেই চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন। প্রতি ওভারে জরুরি রানরেট বাড়ছিল চেন্নাইয়ের। সেই পরিস্থিতি থেকে দলকে টানলেন শিবম দুবে, অজিঙ্ক রাহানে ও অম্বাতি রায়ডু। বিশেষ করে রাহানে ও রায়ডু ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। রাহানের ২৭ ও রায়ডুর ১৯ দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যায়। ফাইনালে যদিও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ধোনি। প্রথম বলেই আউট হয়ে যান তিনি। শেষ ওভারে জিততে দরকার ছিল ১৩ রান। শেষ দু-বলে দুটি বাউন্ডারি মেরে ঠাণ্ডা মাথায় চেন্নাইকে ট্রফি এনে দেন ‘জাড্ডু’।