মোদী জমানায় এর আগে অসম সামাজিক ব্যবস্থা, জাতিগত অত্যাচার এবং অধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত বিষয় পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়েছে তারা। ২০২১ সালে বিএ ইংরেজি অনার্স পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল মহেশ্বতা দেবীর ছোটগল্প ‘দ্রৌপদী’ এবং দলিত লেখক বামা এবং শুকার্থরিণীর আত্মজীবনীমূলক রচনাগুলিও৷ আর এবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস কমিটি বিআর আম্বেদকরের দৃষ্টিতে হিন্দু সামাজিক ব্যবস্থা এবং হিন্দু নারীর উত্থান ও পতন নিয়ে লেখা দুটি থেকে ‘হিন্দু’ শব্দগুলি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। সিলেবাস কমিটির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন শিক্ষামহলের বহু মানুষ। তাদের বক্তব্য, এই ধরনের সুপারিশের উদ্দেশ্য হিন্দু সামাজিক ব্যবস্থায় বর্ণভেদ প্রথাকে আড়াল করা। এটা ইতিহাসকে বিকৃতির চেষ্টা।
প্রসঙ্গত, নিবন্ধ দুটি দিল্লি বিশ্বিবিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সিলেবাসের অংশ হলেও ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন মানববিদ্যায় সব শাখাতেই সেগুলি পড়ানোর সুপারিশ করেছিল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী সিলেবাস কমিটির পরামর্শ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ‘কমিটি অব কোর্স’-এর কাছে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন কলেজের বিভাগীয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত সিলেবাস কমিটি সুপারিশপত্রটি তৈরি করেছে। অধ্যায় দুটি হল, ‘আম্বেদকর অন কাস্ট অ্যান্ড ক্রিটিক অন হিন্দু সোশ্যাল অর্ডার’ এবং ‘রাইজ অ্যান্ড ফল অফ হিন্দু ওম্যান’।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে কোর্স কমিটির সুপারিশ নিয়ে বৈঠকে বিভাগীয় অধ্যাপক এন সুকুমার হিন্দু শব্দ বাদ দেওয়ার প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আম্বেদকরের মূল লেখায় ‘হিন্দু’ শব্দের উল্লেখ আছে এবং তাঁর সমাজ ব্যবস্থার বিশ্লেষণ ছিল হিন্দু সমাজের প্রেক্ষাপটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মূল লেখার আধারে লেখা সিলেবাসের অংশ ওই অধ্যায় দুটি। তা থেকে কোনও শব্দ বাদ দেওয়া যায় না।’ তিনি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু অধ্যাপক নির্বিচারে সিলেবাস বদলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘সিলেবাসের উপর আক্রমণ সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সাম্যের দর্শনের উপর আঘাত।’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে শুক্রবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে।