ক্রমেই বাড়ছে উত্তাপ। সম্প্রতি এগরায় ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ নিয়ে শোরগোল ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এবার এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজি কারখানায় যে ভয়াবহ বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, সেই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করলেন মমতা। তাঁর দাবি, উড়িষ্যা সীমান্তের ওই সব এলাকায় বেশ কিছু বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে। যে কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার মালিককে আগেই রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করেছিল বলেও দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। “২ মাস আগে বিজেপি ওই এলাকায় নির্দলকে সমর্থন করে পঞ্চায়েত তৈরি করে। তাদের তো খবর রাখা উচিত ছিল যে আবার নতুন করে এসব হচ্ছে”, বক্তব্য তাঁর। মমতা বলেন, “উড়িষ্যা সীমান্তে ঘটনাটা ঘটেছে। যিনি কারখানার মালিক তাঁকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। গত কয়েকদিন হল বেআইনিভাবে ফের শুরু করেছিলেন। এরকম কিছু বাজি কারখানা এসব দিকে আছে। স্থানীয় লোকজন কাজ করে। যদি সমস্যা হয়, তখন সেই দায় তাঁদেরই নিতে হয়। আমরা পুলিশ, দমকল সব পাঠিয়েছি।”
পাশাপাশি, বিজেপিকে তোপ দাগতেও ছাড়েননি মমতা। জানান, “২ মাস আগে বিজেপি পঞ্চায়েত তৈরি করে, তাদের খবর রাখা উচিত ছিল যে আবার নতুন করে এসব হচ্ছে। আমাদের কাছে যা খবর, ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাতজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মালিক উড়িষ্যার দিকে পালিয়ে গিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই সিআইডিকে তদন্ত করতে বলেছি। তদন্তের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সিআইডি-র কাছ থেকে রিপোর্ট নেব, দমকলের কাছ থেকেও রিপোর্ট নেব। পুলিশ সুপার নিজেও গিয়েছেন ঘটনাস্থলে। এখন ওখানে বিজেপির পঞ্চায়েত। আমাদের যে বিধায়কেরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আশেপাশেই আছেন। একটা ঘটনা ঘটলে যে কেউ যেতে পারে। পঞ্চায়েতটা যেহেতু তোমার, তাই সেখানে আমাদের লোক ঢুকতে পারবে না? আর কোথায় কোথায় অবৈধ বাজি কারখানা আছে, সেটা দেখতে হবে। সীমান্তে নাকা চেকিং বাড়াতে হবে। কখনও কখনও ঘটনা ঘটে যায় এত বড় রাজ্যে। মৃতদের পরিবারগুলিকে আড়াই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” এছাড়া আহতদের ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার টাকা দেওয়া হবে বলেও জানান মমতা।
বিরোধীদের নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার বন্ধুরা এনআইএ তদন্তের দাবিতে চিৎকার করছে, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। আমাদের কেউ এ ব্যাপারে জড়িত নয়। এনআইএ তদন্ত করে বিচার হলে হোক, আমাদের আপত্তি নেই। তবে আসল ব্যক্তি যেন ধরা পড়েন। কীভাবে তিনি জামিন পেলেন, তা জানতে হবে। রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে তদন্ত করতে হবে। যে অন্যায় করেছে, তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দিন। আমি শুনেছি উনি বাংলাদেশে গিয়েও এই বাজি সাপ্লাই করেন, আবার ওডিশাতেও যান। এই ধরনের কিছু লোক আছে, যাঁরে সীমান্ত এলাকাগুলোতে যান। আর বর্ডার পাহারা দেওয়াটা সবার কাজ, শুধু আমাদের নয়। উড়িষ্যা সরকারকেও জানাব, যাতে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যায়।” প্রসঙ্গত, বিজেপি বলছে যে উক্ত কারখানার মালিক তৃণমূল কর্মী। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “যদি তিনি তৃণমূলের লোক হতেন, তাহলে বেআইনি বাজি কারখানা চালানোর জন্য কেন রাজ্য পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করল? কিছুদিন আগে পঞ্চায়েতটা কিনে নিয়েছে বিজেপি। সুতরাং আমাদের পঞ্চায়েতও নেই। ওদের বলুন রাজনীতি না করতে। এটা বিজেপি, তৃণমূল বা সিপিএমের ব্যাপার নয়।” কেন ওই ব্যক্তি জামিন পাওয়ার পর আবার একই কাজ করছেন, আইসি-কে শোকজ করে তা জিজ্ঞেস করতে হবে বলে জানিয়েছেন মমতা।