বইয়ের কিছু অংশ নিয়ে আপত্তি ছিল তৎকালীন ভারত সরকারের। আর তাই ১৯৪৮-৪৯ সাল নাগাদ ঐতিহাসিক প্রতুল গুপ্তের তত্ত্বাবধানে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা দফতরের ইতিহাস বিভাগের লেখা ‘আজাদ হিন্দ বাহিনীর ইতিহাস’ বই আর প্রকাশের আলো দেখেনি। শুধু তাই নয়। দীর্ঘ ৭৫ বছর কেটে গেলেও আজও সেই পান্ডুলিপি, বই আকারে ছেপে বের হয়নি! নতুন করে বইটি প্রকাশ করতে উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়। সেই নিয়ে মামলা চলছে দিল্লী হাইকোর্টে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে নেতাজি গবেষক চন্দ্রচূড় ঘোষ আরটিআই করে বইটির পান্ডুলিপির প্রতিলিপি দাবি করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন মনমোহন সিং সরকার সেই নথি দিতে অস্বীকার করে। এরপর ২০১০ সালে দেশের তৎকালীন তথ্য কমিশনার সরকারকে বইটি তিন মাসের মধ্যে প্রকাশ করার নির্দেশ দেন। তথ্য কমিশনারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লী হাইকোর্টে মামলা করে সরকার। সিঙ্গল বেঞ্চ তথ্য কমিশনারের নির্দেশই বহাল রাখে। তারপরই ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করে ভারত সরকার।
২০১২ সালের ২৯ মে ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের আবেদন গ্রহন করে। কিন্তু সেই মামলার আজও কোনও নিষ্পত্তি হয়নি। পরে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছিল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিদেশ মন্ত্রকের কাছে জানতে চায় বইটি প্রকাশ করলে অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে কি? বিদেশ মন্ত্রক বই ছাপার ব্যাপারে আপত্তি না জানালেও উল্লেখ করে, ‘ওই পান্ডুলিপির ১৮৬ থেকে ১৯১ নং পাতায় যে বিবরণ দেওয়া আছে তাতে বলা হয়েছে নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি, বরং জীবিত অবস্থায় অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। সুতরাং বিষয়টির সর্বোচ্চ স্তরে মূল্যায়ন করা বাঞ্চনীয়।’
ফলে সেখানেই যেন বই ছাপানোর কাজ থমকে যায়। অবশেষে ২০১৮ সালে ফের বইটি প্রকাশ করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। দিল্লী হাইকোর্টে ফের মামলা শুরু হয়। দিল্লী হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুনানি হয়। কিন্তু তিনি অবসর নেওয়ার পর মামলাটি আর এগোয়নি। সোমবার ফের দিল্লী হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার এজলাসে মামলা শুরু হয়। সুখেন্দু শেখরের পক্ষের আইনজীবী সৌম্য চক্রবর্তী শুনানিতে বইটি প্রকাশের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম উদাসীনতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। অবিলম্বে বইটি প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশের আবেদন জানান।