কর্ণাটকে পদ্ম সাফের পরই বিজেপিমুক্ত হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ভারত। শুধু তাই নয়, দেশে বিজেপি শাসিত রাজ্যের সংখ্যাও আরও কমে ১৫-তে এসে ঠেকেছে। যার অর্থ দেশে মোদী ম্যাজিক ক্রমশই ফিকে হয়ে আসছে। যদিও নির্বাচনে হেরেও সরকার গড়াতে তারা নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করেছে অপারেশন লোটাস অর্থাৎ দল ভাঙানোর খেলায়। সদ্য হাতছাড়া হওয়া কর্ণাটকেও সাড়ে তিন বছর আগে কংগ্রেস বিধায়কদের ভাঙিয়ে দখল করেছিল তারা। বিধানসভা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ২০১৮-র ভোটে সরকার গড়েছিল জেডিএস-কংগ্রেস জোট। সেই সরকার পড়ে যাওয়ার নেপথ্যে ছিল অপারেশন লোটাস। একইভাবে গত বছর মহারাষ্টেও পদ্ম শিবির ফের ক্ষমতায় ফেরে শিবসেনাকে ভাঙিয়ে। তার আগে মণিপুর, মধ্যপ্রদেশে একইভাবে ক্ষমতায় এসেছিল তারা।
প্রসঙ্গত, গত পাঁচ বছরে হওয়া ৩১ বিধানসভার ভোটে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় মাত্র তিনটি রাজ্যে। তবে কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে দেশের মোট নয়টি রাজ্যে। যদিও বিজেপির মতো দল ভাঙিয়ে সরকার গড়ার অভিযোগ আপাতত তাদের বিরুদ্ধে নেই। অন্যদিকে, কর্ণাটকের আগে ভোট হয়েছে ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে। এই তিন রাজ্যের মধ্যে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে একমাত্র ত্রিপুরায়। মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডেও তারা সরকারে আছে। যদিও ভোটে শরিক দলের সঙ্গে লড়াই করে একক শক্তিতে সরকার গড়ার পরিকল্পনা করেছিল গেরুয়া শিবির। ভোটের পর সফল হয়নি তাদের অপারেশন লোটাস-ও। আবার, ২০১৮-তে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোট হয়। যার মধ্যে বিজেপি একটিতেও জিততে পারেনি। তবে মধ্যপ্রদেশে এক বছরের মাথায় কংগ্রেসের বিধায়ক ভাঙিয়ে ফের ক্ষমতা দখল করে পদ্ম শিবির। মধ্যপ্রদেশে তারা কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে পাশে পেয়ে গিয়েছিল।
রাজস্থানে একই ফরমুলায় সচিন পাইলটকে পাশে পেতে চেষ্টা করেছিল তারা। পাইলট তাঁর অনুগামী বিধায়কদের নিয়ে প্রায় মাস খানেকের জন্য হরিয়ানার মানেসরের রিসর্টে গিয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর মিশন সফল হয়নি। অভিযোগ, সচিন শিবিরের মানেসর-সফর স্পনসর করেছিলেন একদা কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ, বর্তমানে বিজেপির কাছের এক ব্যবসায়ী। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-এ দেশে সাতটি রাজ্যে বিধানসভার ভোট হয়েছে। বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় শুধুমাত্র অরুণাচলপ্রদেশে। কিন্তু তারা সরকার গড়ে তিন রাজ্যে। এরমধ্যে মহারাষ্ট্রে লোকচক্ষুর আড়ালে সকাল ৬ টায় গোপনে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল রাজভবনে। যদিও সেই সরকার দু’দিনের বেশি টেকেনি। ২০২০-তে দুই রাজ্য দিল্লী ও বিহারে বিধানসভার ভোট হয়। বিজেপি কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
দিল্লীতে আপের কাছে তাদের লজ্জাজনক হার হয়। যদিও বিহারে ফের জেডিইউ-র হাত ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকে বিজেপি। গত বছর বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে আরজেডির সমর্থনে সরকার টিকিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। এরপর ২০২১-এ ভোট হয়েছিল বাংলা-সহ পাঁচ রাজ্যে। বিজেপি একটিতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। অন্যদলের সমর্থন নিয়ে আসামে এবং নির্দলদের সঙ্গী করে পুদুচেরিতে সরকার গড়ে তারা। পরের বছর, ২০২২-এ ভোট হয় সাত রাজ্যে। বিজেপি সরকার গড়ার সংখ্যা অর্জন করে চারটিতে। কিন্তু সরকার গঠন করে পাঁচ রাজ্যে। এ বছর অর্থাৎ ২০২৩-এ এখনও পর্যন্ত চার রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে। বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে একমাত্র ত্রিপুরায়। সদ্য লজ্জার হার হল কর্ণাটকে। কিন্তু তারা সরকার গড়ছে তিন রাজ্যে।