ফের বিতর্কের কেন্দ্রে বিজেপি। আরও একবার উঠল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ। বিজেপিশাসিত অসমে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বাংলার পোলট্রি মুরগি। ফলত প্রবল সমস্যার মুখে উত্তরবঙ্গের লক্ষ লক্ষ পোলট্রি চাষী। প্রতিদিন কমপক্ষে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখছেন রাজ্যের প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হচ্ছেন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। শনিবার উত্তরবঙ্গ পোল্ট্রি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ জানানো হয় তাঁকে। এই অভিযোগে অসম সরকার বাংলার পোলট্রি মুরগির গাড়ি অসমে ঢুকতে দিচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। যার জেরে উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও রাজ্যেই বাংলার পোলট্রি মুরগি যেতে পারছে না। কোনও গাড়ি অসমে ঢুকলে সেগুলি রাস্তায় আটকে পোলট্রি মুরগি মেরে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন প্রায় কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে পোলট্রি ফার্মার্সদের, অভিযোগ এমনই। উত্তরবঙ্গ পোলট্রি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অসিত ঘোষ বলেন, “মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এই সমস্যা শুরু হয়েছে। কেউ আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। অবশেষে আমরা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। কারণ উত্তরবঙ্গে ৯ লক্ষের বেশি পোলট্রি চাষী রয়েছেন। এর সঙ্গে প্রচুর মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উক্ত ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতার সঙ্গে তুলনা করেছেন ডুয়ার্স পোল্ট্রি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরূপ গোপ। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার হয়ে গেলাম আমরা পোলট্রি চাষী ও ব্যবসায়ীরা। বিজেপিশাসিত অসম সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতীয় সড়ক দিয়ে বাংলার পোলট্রি ঢুকতে দিচ্ছে না। এর ফলে উত্তরপূর্ব ভারতে সাত রাজ্যের কোথাও আমাদের চাষ করা পোলট্রি মুরগি পৌঁছতে পারছে না। এভাবে অসম সরকার জাতীয় সড়কে পোলট্রি মুরগির গাড়ি আটকাতে পারে না।” জানা গিয়েছে, ৬ই মার্চ অসমের ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার একটি নির্দেশিকা জারি করে। সেই নির্দেশিকায় ঝাড়খণ্ড ও বিহারে বার্ড ফ্লু দেখা গিয়েছে বলে জানানো হয়। আর সেই কারণে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার সীমানা দিয়ে কোনও পোলট্রি মুরগির গাড়ি অসমে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পোলট্রি ব্যবসায়ীদের দাবি শুধু আলিপুরদুয়ারের পাকরিগুড়ি সীমানা দিয়ে অসম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ-সহ উত্তরপূর্ব ভারতের অন্যান্য জায়গায় প্রতিদিন ১ লক্ষ ৪০ হাজার কেজি পোলট্রি মুরগি যায়। এই বিপুল পরিমাণ পোলট্রি মুরগি এখন আর অসমে ঢুকতে পারছে না। যার জেরে কম দামে দক্ষিণবঙ্গ ও অন্যান্য জায়গায় পোলট্রি মুরগি পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা। বিষয়টি নিয়ে শনিবার আলিপুরদুয়ারে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর বাড়িতে যান উত্তরবঙ্গ পোলট্রি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। তাঁরা সৌরভ চক্রবর্তীকে লিখিতভাবে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। এদিন সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “বাংলাকে অসম সরকার ভাতে মারার চেষ্টা করছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক বার্ড ফ্লু-এর নির্দেশিকা প্রত্যাহার করলেও অসম সরকার তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না। কিন্তু আমাদের রাজ্য থেকে মুরগির বাচ্চা ও মুরগির খাবার নিচ্ছে তারা। রাজ্যের প্রানী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সঙ্গে আমার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে বিষয়টি নিয়ে চিঠি লিখছেন। আমি বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাচ্ছি। বাংলার পোলট্রি অসমে ঢুকতে না দিলে জোরদার আন্দোলন তৈরি করা হবে।” উত্তর বাংলার সব জেলাতেই কমবেশি পোলট্রি মুরগির চাষ হয়। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ৯ লক্ষাধিক পোলট্রি চাষী রয়েছেন। ব্যবসা করেন প্রায় ২০ হাজার ব্যবসায়ী। অসম সরকারের নতুন নির্দেশিকার ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও রাজ্যে পোলট্রি মুরগি পাঠাতে না পেরে ব্যাপক ক্ষতির কবলে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।