অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে করেছিলেন ১০৬ রান। মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টেও করেন সেঞ্চুরি, থামেন ১২৩ রানে। এখানেই শেষ নয়, বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির চতুর্থ ও শেষ টেস্টেও হেসেছে চেতেশ্বর পূজারার ব্যাট। ভারতীয় দলের এই ব্যাটিং স্তম্ভ দেখা পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৮তম টেস্ট শতকের।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে চার টেস্টের সাত ইনিংসের মধ্যে তিনটিতেই দেখা পেয়েছেন সেঞ্চুরি। পূজারার এমন অনবদ্য ও ধৈর্য্যশীল ব্যাটিং দেখে স্বভাবতই মুগ্ধ বীরেন্দর সেহবাগ-ভিভিএস লক্ষণরা। ভারতীয় এই ক্রিকেটারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটাররাও। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চলছে এখন পূজারাবন্দনা।
সিডনি টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ডাবল সেঞ্চুরিটা পেতে গিয়েও পেলেন না চেতেশ্বর পূজারা। ১৯৩ রানে ফিরেছেন তিনি। কিন্তু তিনি ডাবল সেঞ্চুরি না পেলেও ভারত কিন্তু ঠিকই রান পাহাড়ে চড়েছে। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৬২২ রান তুলে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে বিরাট কোহলির দল।
৩৭২ বল খেলেছেন সফলভাবে। নিজেকে ডাবল সেঞ্চুরি থেকে যখন ৭ রান দূরে দেখছেন, ঠিক তখনই ভুলটা করলেন পূজারা। মুখোমুখি হওয়া ৩৭৩তম বলে নাথান লায়নের বলে তাঁর হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ড্রেসিং রুমের দিকে হাঁটলেন। ইনিংসে ২২টি বাউন্ডারি মেরেছেন।
ব্যক্তিগত ১৩০ রানে এদিন খেলা শুরু করা পূজারা লাঞ্চের মধ্যে যোগ করেন ৫১ রান৷ প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দেড়শো রানের গণ্ডি টপকে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছেন টিম ইন্ডিয়ার এই রানমেশিন৷ ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বাধিক বল ফেস করার ক্ষেত্রে রাহুল দ্রাবিড়কে পিছনে ফেলেছেন পূজারা৷ এদিন সর্বাধিক ১২০৩ বল খেলার রেকর্ড ছিল দ্রাবিড়ের দখলে৷ কিন্তু শুক্রবার সাকালেই দ্রাবিড়কে টপকে নজির গড়েন পূজারা৷
সিডনি টেস্টে পূজারার ব্যাটিং দেখার পরে একটা কথাই বলতে হবে। চেতেশ্বর পূজারার মনঃসংযোগের কাছে হার মেনেছে অস্ট্রেলিয়া। চেতেশ্বর পূজারার বল ছাড়ার দক্ষতার কাছে আত্মসমর্পণ করলেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। পূজারার ব্যাটিং দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, বোলাররা কোন ছাড়, বোলিং মেশিনও সম্ভবত ক্লান্ত হয়ে পড়বে এ রকম এক জন ব্যাটসম্যানের সামনে! এই ডিআরএস-এর যুগে ব্যাটসম্যানরা প্যাডে খেলতে ভয় পায়। কিন্তু পূজারার ফুটওয়ার্ক এত ভাল, নিজের ওপর ওঁর এত বেশি আত্মবিশ্বাস যে, নেথান লায়নের ছোটখাটো স্পিনগুলো স্টেপ আউট করে প্যাডে নিয়ে নিচ্ছিলেন। পাশাপাশি স্টেপ আউট করা মানেই যে বল লিফ্ট করা নয়, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন পূজারা। রাহুল দ্রাবিড় যেমন ছিলেন। দ্রাবিড়-সভ্যতা বিদায় নিয়েও যেন নেয়নি। পূজারার হাত ধরে যেন বংশের প্রদীপ জ্বলছে।