বেশিদিন আগের কথা নয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই কর্ণাটকের বেল্লারিতে ‘বিজয় সংকল্প যাত্রা’য় ভাষণ দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীকে একবার বিশ্বাস করুন এবং ইয়েদিউরপ্পাকে একবার বিশ্বাস করুন। আমরা এমন একটি সরকার গঠন করব যা কর্ণাটককে দুর্নীতিমুক্ত এবং দক্ষিণ ভারতের এক নম্বর রাজ্যে পরিণত করবে।’ প্রশ্ন হল, নির্বাচনের দোরগোড়ায় কেন বিশ্বাস অর্জনের এই আকুতি? আসলে একজন ঠিকাদারের মৃত্যু, বিভিন্ন সংস্থা দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠি এবং লোকপালের তৎপরতায় একজন বিধায়কের গ্রেফতারি কর্ণাটকের বিজেপি সরকারকে গত চার বছরে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
২০২১ সালের নভেম্বরে কর্ণাটক রাজ্য ঠিকাদার সমিতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। বিজেপি সরকারের সমস্ত স্তরে দুর্নীতিতে ক্লান্ত হয়ে অ্যাসোসিয়েশন প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করেছিল এবং প্রতিটি সরকারি চুক্তির জন্য যাতে তাদের ৩০-৪০ শতাংশ ঘুষ দিতে না হয় তা নিশ্চিত করতে বলেছিল। তারা স্পষ্ট জানিয়ে ছিল কংগ্রেস এবং জেডি(এস) শাসনামলে দুর্নীতি ছিল, তবে এতটা ব্যাপক ও ভয়ংকর ছিল না। তবে ঠিকাদাররা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র কারণ ঘুষ ছিল না। একজন দুর্দশাগ্রস্ত ঠিকাদার, যিনি বিজেপি সদস্যও ছিলেন, তার আত্মহত্যা একটি সংকেত ছিল যে, পরিস্থিতি খারাপ থেকে চূড়ান্ত খারাপের দিকে যাচ্ছে৷
২০২১ সালের মার্চ মাসে বেলগাভি জেলার সন্তোষ কে পাটিল নামে একজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, যে তাঁর বিল পরিশোধ করা হয়নি, কারণ তিনি কর্ণাটকের গ্রাম উন্নয়ন ও পঞ্চায়েতরাজ মন্ত্রী কে এস ঈশ্বরাপ্পাকে ঘুষ দেননি। সন্তোষের অভিযোগ এবং অ্যাসোসিয়েশনের চিঠি কয়েকদিন ধরে শিরোনাম হয়েছিল। বিজেপি সরকার দাবি করেছিল, যে অভিযোগগুলি অসত্য এবং তদন্তে তা প্রমাণিত হবে। কিন্তু ১২ এপ্রিল ২০২২-এ সন্তোষ পাটিলকে উদুপির একটি লজে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার একদিন আগে তিনি এক বন্ধুকে মেসেজ করে জানিয়েছিলেন, যে ঈশ্বরাপ্পা তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী। এরপর ১৫ এপ্রিল মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ঈশ্বরাপ্পা।
যদিও সন্তোষের পরিবার আদালতে পুলিশের পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করেছে, অভিযোগ করেছে যে, পুলিশ আদালতে মূল প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। এই ঘটনায় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝড় ওঠে। এরপর ২০২২ সালের আগস্টে নিবন্ধিত আনএডেড প্রাইভেট স্কুল ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরইউপিএসএ) কর্ণাটক ইউনিট শিক্ষা বিভাগে দুর্নীতির অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেয়। প্রমাণের অভাবে কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনকে কীভাবে কোণঠাসা করা হয়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরে আরইউপিএসএ প্রমাণস্বরূপ কর্মকর্তাদের ঘুষ চাওয়ার ফোন কল সংগ্রহ করে রেখেছিল।
তারা অভিযোগ করেছে যে, প্রাথমিকভাবে দু’টি অজুহাতে ঘুষ নেওয়া হচ্ছে– শিক্ষার অধিকার খাতে বরাদ্দ সরকারি অনুদান অনুমোদন ও রিলিজ করা এবং স্কুলের স্বীকৃতি পুনর্নবীকরণের জন্য। এখানেই শেষ নয়। গত দুই বছরে বিজেপি আরও অনেক দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পড়েছে। ৫৪৫ টি পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর পদ পূরণের জন্য ২০২১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত কর্ণাটক পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর (পিএসআই) পরীক্ষায় বড় কেলেঙ্কারি ছিল। কালাবুরাগীর স্থানীয় বিজেপি নেতা দিব্যা হাগারাগি, যিনি একটি কোচিং প্রতিষ্ঠান চালাতেন, এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে ছিলেন।