আগামী বছরই লোকসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই রণকৌশল তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিরোধীরা। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এবার মমতার এই ‘বিরোধী ঐক্যের সূত্র’-কে সমর্থন জানাচ্ছেন কংগ্রেস নেতারাও। উল্লেখ্য, গত বছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই মমতা বলেছিলেন, চব্বিশের লোকসভা ভোটে যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে। ভোটের আগে নয়, ভোটের পরে বিজেপিকে সরাতে জোট হবে। সেই সময়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের ধারণা ছিল, মমতা আসলে বিরোধী জোটে রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের নেতৃত্ব মেনে নিতে চাইছেন না। নিজেই নিজের নীতি মেনে চলছেন না মমতা। গোয়া, ত্রিপুরায় গিয়ে বিজেপি-বিরোধী ভোটে ভাগ বসাচ্ছেন। কিন্তু সেই সময়েই মনু সিঙ্ঘভি বলেছিলেন, বিজেপি-বিরোধী জোটে বিভাজন রুখতে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। কারণ, বিজেপি এমনিতেই ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পায় না। কিন্তু বাকি বিরোধী ভোটের বিভাজনের ফলেই জিতে যায় তারা।
ইতিমধ্যেই বিরোধী ঐক্য নিয়ে অন্যান্য বিরোধী দলের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। পাশাপাশি শশী থারুর, মণীশ তিওয়ারির মতো কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদেরা প্রকাশ্যে সওয়াল করতে শুরু করেছেন যে ,কংগ্রেস যেখানে দুর্বল, সেখানে অন্য দলকে জায়গা ছেড়ে দিক। একই ভাবে যে সব রাজ্যে সরাসরি বিজেপি বনাম কংগ্রেসের লড়াই, সেখানে অন্য আঞ্চলিক দল গিয়ে বিরোধী ভোটে ভাগ বসাবে না। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতো বহু দিন ধরে একই সওয়াল করছেন রাজ্যসভার সাংসদরা। শশী বলছেন, লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২০০টির মতো আসনে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই। গত লোকসভায় কংগ্রেস ৫২টি আসন জিতেছে। এখন বাকি বিরোধী দলের নেতৃত্বকে বোঝাতে হবে, যেখানে অন্যেরা শক্তিশালী, সেখানে কংগ্রেস বাকিদের জায়গা ছেড়ে দেবে। যেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী, সেখানে ওঁদেরও কংগ্রেসকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এখন প্রয়োজন হল এই ৫৪৩টি আসন ধরে ধরে খতিয়ে দেখা, কোন আসনে কোন অ-বিজেপি দলের জেতার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। সেখানে অন্য কেউ ভোটে ভাগ বসাবে না। এটা করা গেলেই শক্তিশালী হবে বিরোধী ঐক্য।
পাশাপাশি লোকসভার সাংসদ মণীশ তিওয়ারির মতে, এই কাজটা রাজ্য স্তরে সব থেকে ভাল ভাবে করা সম্ভব। রাজ্য স্তরেই আসন সমঝোতা বা বোঝাপড়া সেরে ফেলতে হবে। জাতীয় স্তরে জোট করতে হলে ন্যূনতম কর্মসূচী তৈরি করতে হবে। তাতে অনেক মতাদর্শগত বিরোধ চলে আসবে। সে সব মেটাতে সমস্যা হবে। তিওয়ারির মতে, এ সবের মধ্যে না গিয়ে শুধুমাত্র ‘কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন দরকার’ এইটুকু ন্যূনতম কর্মসূচী নিয়েই বিরোধীদের একজোট করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনে কংগ্রেসকে এক পা পিছিয়ে দাঁড়াতে হবে। কংগ্রেস নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ঝাড়খণ্ড থেকে মহারাষ্ট্র, বিহার থেকে তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে কংগ্রেসের রাজ্য স্তরে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট বা সমঝোতা রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনেও বহাল থাকবে সেই কৌশল।