বছর ঘুরলেই দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই রণকৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। খানিক চিন্তায় শাসকদল বিজেপি। মরিয়া হয়ে এবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকেই ভোটের অন্যতম তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চলেছে তারা। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সারমর্ম হল, সব ধর্মের জন্য সম আইন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৯ – বিজেপির প্রতিটি নির্বাচনী ইস্তাহারে এই প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বিজেপির প্রধান তিন ঘোষিত এজেন্ডা হল রামমন্দির, ৩৭০ অনুচ্ছেদের অবলুপ্তি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। প্রথম দু’টি সম্পন্ন। বাকি শুধু এটিই। আর কয়েকদিন বাদেই কর্ণাটক বিধানসভা ভোট। এরপর একে একে রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মিজোরামেও রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। ২০১৮ সালে বিজেপির রমরমাতেও এই তালিকার একটি রাজ্যেও বিজেপি জয়ী হতে পারেনি। পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে সরকার গড়তে হয়েছে কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশে। তাই এবার অনেকটাই চিন্তিত তারা। এই রাজ্যগুলির ফলাফলের সামান্য প্রভাবও যদি ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে পড়ে, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যথেষ্টই শক্ত হবে পদ্মশিবিরের কাছে।
উল্লেখ্য, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির অর্থ, বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির ভাগাভাগি, উত্তরাধিকার, দানের মতো ক্ষেত্রে প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য একই আইনের প্রণয়ন। আরএসএস তথা বিজেপির এই আইন বলবৎ করার দাবি দীর্ঘকালের। এর প্রধান উদ্দেশ্য অবশ্যই মুসলিম পার্সোনাল ল মুছে দেওয়া। এই প্রত্যেকটি বিষয় তখন আর ওই সম্প্রদায়ের নিজস্ব আইনমাফিক কার্যকর হবে না। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বিয়ে না করলে অভিন্ন বিধিই কার্যকর হবে তাদের সমাজে। একইভাবে খ্রিস্টান এবং পার্সিদের ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত আইন আর কার্যকর হবে না। এদেশে প্রত্যেক ধর্মের পৃথক আচার-বিধি রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, কোনও ধর্মকেই তাদের আচার বা বিধি পালনে বাধা দেওয়া যায় না। এই আইন কার্যকর হলে স্পষ্টতই সমাজে ধর্মীয় মেরুকরণ মাথাচাড়া দেবে। বিরোধীদের অভিযোগ, সেটাকেই ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে বিজেপি। গোয়ায় অভিন্ন বিধি চালু এবং উত্তরাখণ্ডে সরকারে আসার পর কার্যকরের ঘোষণা করেছে বিজেপি। গত কয়েক বছরে সংসদে প্রাইভেট মেম্বার বিলও এনেছেন একাধিক বিজেপি সাংসদ। যা মূলত জনগণের প্রতিক্রিয়া যাচাইয়ের কৌশল বলেই ভনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
