গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিতেই কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। শর্ত মূলত দুটি। প্রথমত, তাঁকে অবশ্যই দেশের নাগরিক হতে হবে। এবং দ্বিতীয়ত, রাজ্যসভা বা লোকসভার সদস্য হতে হবে। এই দুটি শর্ত পূরণ করলেই নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা না-থাকলেও দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়। তবে ভারতের সকল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরই শিক্ষা ছিল রীতিমতো সমীহ জাগানোর মতোই। যেখানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। বিশেষত অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। সম্প্রতি জেলবন্দি আপ নেতা মণীশ সিসোদিয়াও সেই প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিতর্কের আবহেই জেনে নেওয়া যাক প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা মোদীর পূর্বসূরীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে ন্যাচরাল সায়েন্সেস নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তীতে আইন নিয়েও তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। তাঁর পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। বারাণসীর মহাত্মা গান্ধী কাশী বিদ্যাপীঠ থেকে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। এরপর দেশ পায় প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। তিনি যেমন বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করেছিলেন, তেমনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আধুনিক ইতিহাস নিয়েও পড়াশোনা করেছিলেন। এ ছাড়াও জীবনের বিভিন্ন পর্বে নান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নান বিষয়েরই পাঠ নিয়েছেন তিনি। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই প্রথম জীবনে পড়াশোনা করেন সেন্ট বুসার হাই স্কুলে। পরবর্তীতে তৎকালীন বম্বে ইউনিভার্সিটির উইলসন কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি পান।
খুব অল্প সময়ের জন্যই প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন চরণ সিং। তিনি বিজ্ঞানে স্নাতক। আগ্রা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আইন নিয়েও পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। ইন্দিরার মৃত্যুর পর দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা-তনয় রাজীব গান্ধী। কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েও তিনি পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি দিল্লি ফ্লাইং ক্লাব থেকে পাইলট হওয়ারও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন রাজীব। এর পর বছর খানেক সময়কালের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। পুনে ইউনিভার্সিটির ফার্গুসন কলেজ থেকে তিনি পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হয়েছিলেন। পরে এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন আইন নিয়ে। বছরখানেকেরও কম সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্র শেখর। তিনি এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করেছিলেন হিউম্যানিটিজ নিয়ে। নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী হন অটলবিহারী বাজপেয়ী। স্নাতক স্তরে হিন্দি, ইংরেজি ও সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্নাতকোত্তর স্তরে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে। দেশের একাদশ তম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এইচ ডি দেবগৌড়া। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা করেছিলেন তিনি। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল বাণিজ্যে উচ্চশিক্ষার পর পিএইচডি করেছিলেন। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হন ড. মনমোহন সিং করেছিলেন অর্থনীতি নিয়ে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর স্তরে তিনি অর্থনীতিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। পরবর্তী কালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে তিনি এই নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন ও গবেষণা করেন।