ফের বিতর্কে জড়ালেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। দায়িত্বে আসার পর থেকেই একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করেছেন তিনি। এবার বসন্ত বন্দনা উদযাপন নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করলেন। বললেন, “আবির খেলার নাম করে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের মধ্যে যে অসভ্যতা, অভদ্রতা, অশালীন ব্যাপার হতো, তা মোটেই সভ্য মানুষের কাজকর্ম ছিল না।” শুক্রবার বসন্ত বন্দনা উদযাপনের দিনেও এমন বিতর্কিত বক্তব্য রাখলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, আগামী ৭ই মার্চ দোল পূর্ণিমা হলেও তার আগেভাগে এদিন বসন্ত উৎসবের পরিবর্তে বসন্ত বন্দনা উদযাপন করে কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে ঢোকার জন্য বেঁধে দেওয়া হয় পোশাক বিধিও। বিষয়টি নিয়ে এদিন সকালে অভিভাবকদের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদ হয় রক্ষীদের। অবশেষে অভিভাবকদের চাপে পিছু হটেন বিশ্বভারতীর রক্ষীরা। তবে অভিভাবকরা ঢুকলেও এদিনও সাংবাদিকদের কোনও প্রবেশাধিকার ছিল না। সংবাদমাধ্যমকে বঞ্চিত করার ব্যাপারটি সর্বত্র সমালোচিত হয়েছে। এরপর বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য মেনে ‘খোল দ্বার খোল’ গানে শোভাযাত্রা শুরু হয়। সেখানে বিশ্বভারতীর পাঠভবন, শিক্ষাসত্র, সঙ্গীত ভবন ছাড়াও ভাষা-বিদ্যা-শিক্ষা ভবনের পড়ুয়ারাও অংশগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে মূলপর্ব শুরু হয়। যেহেতু দু’বছর পর ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, তাই অনুষ্ঠানের মাঝে আবির খেলার মাধ্যমে উন্মাদনা ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন পড়ুয়াদের একাংশ, যা উপাচার্যের নজর এড়ায়নি। এরপর তা বন্ধ করতে উদ্যত হন নিরাপত্তারক্ষীরা।
এদিনের অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “আমরা বীরভূমে কিছু বীভৎস খেলা দেখছিলাম। সেই খেলা থেকে বীরভূম জেলাকে মুক্ত করার জন্য এই বসন্ত বন্দনা শুরু করেছি। বসন্ত বন্দনা মানে হুজ্জুতি আর আবির খেলার নামে অসভ্যতা করা নয়। আমরা আজ তা দেখেছি। যারা আবির খেলতে এসেছিল, তারা ছাত্রছাত্রী কি না, জানি না। হয়তো বা বাইরের লোকজন এসেছিলেন। সেই অসভ্যতা আমার ভালো লাগেনি। কারণ গুরুদেব শুরু করেছিলেন বসন্ত বন্দনা। পরবর্তীকালে সেটি উৎসব হয়ে বসন্ত তাণ্ডবে পরিণত হয়। তার থেকে বাঁচার জন্যই আমরা বসন্ত বন্দনা করেছি। আবির খেলা নিশ্চয় হতে পারে। কিন্তু আবির খেলার নাম করে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের মধ্যে যে অসভ্যতা, অভদ্রতা হতো, তা মোটেই সভ্য মানুষের কাজকর্ম ছিল না। বসন্ত বন্দনার মাধ্যমে একটা ইতিহাস তৈরি করলাম। আশা করি, সেই ইতিহাস আমরা বজায় রাখতে পারব।” প্রত্যক্ষদর্শী পড়ুয়াদের দাবি, এদিন সকালে অনুষ্ঠান চলাকালীন আবির খেলছিলেন একদল ছাত্রছাত্রী। সেই ছবি মোবাইলবন্দি করার অভিযোগে এক পড়ুয়াকে বেধড়ক মারধর করেন বিশ্বভারতীর নিরাপত্তাকর্মীরা। আহত ওই ছাত্র বিশ্বভারতীর পল্লী সংগঠন বিভাগের রুরাল স্টাডিজের স্নাতক স্তরের পড়ুয়া। পরে অবশ্য বিশ্বভারতীর কর্মীরাই ওই ছাত্রের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তবে মারধরের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠন ভিবিউফা। নিন্দায় সরব হয়েছে একাধিক মহল।