বিজেপির শাসনকালে ক্রমশই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে দেশের অর্থনীতি। এত বছরেও মেলেনি কোনও ইতিবাচক দিশা। বারবার সমস্যার কবলে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন যতই দাবি করুন না কেন, দেশের অর্থনীতির হাল ফিরছে, বাস্তব পরিস্থিতিটি একেবারেই বিপরীত। বরং দেখা যাচ্ছে, শতাংশের নীচে আর্থিক বৃদ্ধির হার। উৎসবের মরশুমেও হাল ফিরল না দেশের অর্থনীতির। মোদী সরকার চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক থেকেই দাবি করছে, জিডিপি বৃদ্ধিহার আশানুরূপ হবে। কিন্তু প্রচারই সার। যতই দিন এগোচ্ছে, আর্থিক ঘাটতিতে নয়া রেকর্ড গড়েই চলেছে মোদী সরকার। মূল্যবৃদ্ধির হার আকাশছোঁয়া। বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার তলানিতে। ডলারের দামও নজির গড়ে ফেলেছে বহুদিন। আমদানি নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে, উদ্বেগজনকভাবে কমছে রপ্তানির হার। চলতি অর্থ বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের জিডিপি বৃদ্ধিহার কমতেই অর্থনীতির সংকট আরও ঘনীভূত হল। আর এতেই কার্যত সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রসঙ্গত, অনুমান করা হয়েছিল যে জিডিপি বৃদ্ধিহার ৪.৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে। পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসতেই দেখা গেল, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমায়, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধিহার ৪.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। বলাই বাহুল্য, মন্দার হাতছানি ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগজনক, এমনটাই মত অর্থনৈতিক মহলের। জিডিপির পাশাপাশি, উৎপাদন ক্ষেত্রের বৃদ্ধিহারও কমে গিয়েছে। চলতি অর্থ বছরের প্রতিটি ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধিহার কমছে। ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে জিডিপি বৃদ্ধিহার ছিল ১৩.৫ শতাংশ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে সেই হার ৬.৩ শতাংশে নেমে আসে। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আরও কমে ৪.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। ওই সময় অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ছিল উৎসবের মরশুম, এই সময় দেশজুড়ে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা, আর্থিক লেনদেন হওয়ার কথা। কিন্তু জিডিপি বৃদ্ধির হারে কোনও প্রতিফলন দেখা গেল না। চলতি ত্রৈমাসিকে ফলাফল কী হতে চলেছে, তা নিয়ে চিন্তায় মোদী সরকার এবং দেশের বাণিজ্যমহল। অন্যদিকে, ক্রমবর্ধমান আর্থিক ঘাটতি দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা। ১০ মাসে রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে ১৯ লক্ষ কোটি টাকার মতো। ব্যয় হয়েছে ৩১ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। রাজস্বে ট্যাক্স বাবদ এসেছে ১৬ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। ট্যাক্সবহির্ভূত আয়ের পরিমাণ কমবেশি ২ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু উৎসবের মরশুমে আর্থিক লেনদেনের অঙ্ক যথেষ্ট সংশয়সূচক। আগুন দাম, উৎপাদন শিল্পের দৈন্য দশা ও বাণিজ্য ঘাটতিতে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে মন্দার ছবি। গত সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার রপ্তানি কমতে কমতে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। জিডিপি বৃদ্ধি কমছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধ্বংসের মুখে গ্রামীণ ভারতের ক্রয়ক্ষমতা। যা অশনি সংকেত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।