আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে। ভালবাসার পার্বণে মেতে উঠেছে মানুষ। আবহমান কাল ধরে প্রেমের বিভিন্ন বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত রীতিমতো হতবাক করেছে সবাইকে। কিছুদিন আগেই শোনা গিয়েছিল, মৃত স্ত্রীকে মনে রেখে তাঁর সিলিকনের মূর্তি বানিয়েছেন এক ব্যক্তি। প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখার এই চেষ্টায় বিমুগ্ধ হয়েছিলেন অনেকেই। কেবল এই ব্যক্তিই নন, অনেকসময়ই প্রেমের জন্যেই আশ্চর্য কাজ করেছেন বহু সাধারণ মানুষ। আজ, জেনে নেওয়া যাক তাঁদের গল্পই। পঙ্গু স্ত্রীকে পিঠের ঝুড়িতে বয়ে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে এক দরিদ্র বৃদ্ধ। রোগিণীর ঘায়ে অসহ্য গন্ধ, চিকিৎসাকর্মীরাও তার কাছে যেতে নারাজ, অথচ বৃদ্ধের কোনও বিকার নেই। না, সেরে ওঠা সম্ভব ছিল না ওই মহিলার পক্ষে। কিন্তু তার মৃত্যুর পরে দেখা যায়, সামান্য উপকরণ নিয়ে একা হাতেই তার সমাধি গড়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছে ওই বৃদ্ধ, যার নাম ফকির শাজাহান। এমনই এক আশ্চর্য প্রেমের কাহিনি শুনিয়েছিলেন বনফুল, তাঁর ‘তাজমহল’ গল্পে। প্রিয় স্ত্রী মমতাজের প্রেমের স্মৃতিতে সম্রাট শাজাহানের তাজমহল নির্মাণের অনুষঙ্গে সাধারণ মানুষ দুটিকে জুড়ে দিয়েছিল সেই কাহিনি। আসা যাক উত্তরপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামের পোস্টমাস্টার ফৈজুল কাদরির কথায়। দাম্পত্যের আটান্ন বছর পর যখন তাঁর স্ত্রী তাজামুল্লি মারা যান, তখন দেখা যায় নিজের জমিজিরেত, বউয়ের গয়না সব বিক্রি করে, শেষ সম্বলটুকু দিয়ে তাজমহল বানাতে শুরু করেছেন ফৈজুল। স্ত্রীকে নাকি এমনটাই কথা দিয়েছিলেন তিনি। খবর পেয়ে তাঁকে অর্থ সাহায্য করতে চেয়েছিলেন খোদ সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ওই টাকায় গ্রামে মেয়েদের জন্য কলেজ গড়ে দিতে বলেন ফৈজুল। কিন্তু এই তাজমহল গড়ার দায়িত্ব তাঁরই। একইভাবে স্ত্রীর মূর্তি গড়ে মন্দির বানিয়েছেন তামিলনাড়ুর এক ৮৪ বছরের বৃদ্ধ। তাঁর কথায়, ৫০ বছর একসঙ্গে ঘর করেছেন দুজনে। স্ত্রীকে না দেখে তিনি থাকতে পারবেন একদণ্ডও।
পাশাপাশি, থাইল্যান্ডের শ্যাডিল ডেফি অবশ্য বিয়েই করেছিলেন তাঁর মৃত প্রেমিকাকে। কলেজ থেকে প্রেম, কিন্তু বিয়ে করার ফুরসত আর মিলছিল না তাঁদের। অবশেষে, দশ বছর প্রেমের পর যখন বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয়। তার ঠিক আগেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল তাঁর প্রেমিকা অ্যানের। কিন্তু তার পরেও বিয়েটা আর বাতিল করেননি ডেফি। প্রেমিকার শেষকৃত্যের দিনই বিয়ের পোশাকে সেজে তাঁর আঙুলে বিয়ের আংটি পরিয়ে দেন এই যুবক। আবার মৃত্যুর হাত থেকেই প্রেমিকাকে ফিরিয়ে এনেছিলেন এক যুবক। নাৎসি রক্ষী ফ্রান্ৎজ ভুঙ্ক, গ্যাসচেম্বার থেকে রেহাই দিয়েছিল হেলেনা সিট্রোনোভা নামে এক ইহুদি মেয়েকে, এমনকী তার বোনকেও। আবার ব্যক্তিগত প্রেমেই এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছিলেন দশরথ মাঝি। প্রথাগত শিক্ষা নেই, টাকাপয়সাও নেই বিশেষ। কিন্তু প্রেমে ভাটা পড়েনি এতটুকু। গ্রামের যে মেয়েটির প্রেমে আকুল হয়ে তাকে বিয়ে করেছিলেন দশরথ, সেই বউ-ই একদিন পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে যায়। তাও অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। হাসপাতাল শহরে, কিন্তু সেখানে যাওয়ার কোনও রাস্তা গড়ে দেয়নি সরকার। বউকে কাঁধে নিয়ে ৭০ কিলোমিটার পাকদণ্ডি পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন দশরথ। কিন্তু ততক্ষণে স্ত্রী আর বেঁচে নেই। দশরথ সেদিনই ঠিক করেছিলেন, ওই পাহাড় কেটে রাস্তা বানাবেন তিনি। যাতে আর কেউ চিকিৎসার অভাবে তার ভালবাসার মানুষকে না হারায়। আর পরের বাইশটা বছর ধরে সেই কাজটাই একা করে চলেছেন দশরথ মাঝি। আমেরিকার মধ্যভাগে নেব্রাস্কা বলে যে অঞ্চলটি রয়েছে, তার উত্তর দিকে রয়েছে একটি শহর, মনোওয়াই। চেকোস্লোভাকিয়া থেকে দেশান্তরী হয়ে আসা মানুষেরা এই শহরটি গড়ে তুলেছিলেন এককালে। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার পর স্বামী রুডির সঙ্গে এই শহরে এসে সংসার পাতেন এলসি এলার। ১৯৩০ সালে শহরের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫০। তারপর যা হয়, কারও কারও মৃত্যু হতে থাকে, কেউ কাজের জন্য চলে যান অন্য শহরে, সব মিলিয়ে শহরের জনসংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। শেষমেশ রুডি আর এলসি, এই দুজন ছাড়া এখানে আর কেউই ছিল না। আর ২০০৪ সালে রুডির মৃত্যুর পর এলসি সম্পূর্ণ একা হয়ে যান। তাঁদের দুই সন্তানও থাকেন অন্য শহরে। তবুও এক অদ্ভুত মায়ায় একাই এই শহরে রয়ে গিয়েছেন এলসি। শহরের মেয়রের দায়িত্ব সামলানো, লাইব্রেরি থেকে বার-এর তত্ত্বাবধান, সমস্ত কাজ নিজেই হাতেই সামলান এলসি।