সম্প্রতি একের পর এক টুইটে বা প্রকাশ্য জনসভায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সমালোচনা করেই চলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দলের তরফে একমাত্র রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত ছাড়া এখনও পর্যন্ত অন্য কোনও নেতা সেই সুরে সুর মেলাননি। আর এর থেকেই স্পষ্ট যে শুভেন্দুর রাজ্যপাল-বিরোধিতায় সায় নেই দলের।
প্রসঙ্গত, স্বপন ‘স্বতঃপ্রণোদিত’ হয়ে ওই সমালোচনা করেননি বলেই বিজেপির একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল। স্বপন যতটা না ‘রাজনীতিক’, তার চেয়েও বেশি ‘তাত্ত্বিক’ বলেই পরিচিত। ফলে তাঁর কোনও মন্তব্য থেকে বিজেপির ‘দূরত্ব’ রচনারও একটা অবকাশ ছিল। কিন্তু স্বপনের পর শুভেন্দু ব্যতিরেকে আর কোনও নেতা রাজ্যপালকে আক্রমণ করেননি। বিজেপির একটি সূত্রে দাবি, বাকিরা যাতে তা না করেন, তেমনই নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এর কোনও সত্যতা কেউই স্বীকার করেননি।
এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুভেন্দু প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি রাজভবনকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে চান না। সংবাদ মাধ্যমকে সুকান্ত বলেন, ‘আমরা মনে করি, রাজনীতি ময়দানে নেমেই করতে হবে। তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে রাজভবন কখনও অস্ত্র হতে পারে না। রাজ্যপাল সাংবিধানিক প্রধান। তাঁর সঙ্গে রাজনীতির দূরত্ব অনেক বলেই বিশ্বাস করে বিজেপি।’
উল্লেখ্য, রাজভবনে আসা ইস্তক রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে ‘সুসম্পর্কেরই’ ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে সরস্বতী পুজোর দিন বাংলায় হাতেখড়ি হয়েছে তাঁর। সেই অনুষ্ঠান ঘোষিত ভাবে বয়কট করেছিলেন শুভেন্দু। আবার জানুয়ারি মাসে রাজভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রাজ্যপালের। সেই বৈঠক নিয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন জনগণের মনে রাজ্যপালের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। তা নষ্ট করতে নাটক করা হয়েছে। রাজ্যপালের (বৈঠকে) থাকা উচিত ছিল না।’ গত শনিবার ও সোমবারেও রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে দু’টি টুইট করেছেন শুভেন্দু।
এখনও পর্যন্ত বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব এ নিয়ে শুভেন্দুকে কোনও বার্তা দিয়েছেন কি না জানা, তা কেউ বলতে পারছেন না। তবে এ বিষয়ে রাজ্যের সাংসদদের বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে খবর। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘আনন্দ বোসকে রাজ্যপাল হিসাবে বাংলায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও সম্মকি ছিল। আনন্দ বোস তাঁর পছন্দের মানুষ। লাগাতার তাঁকে আক্রমণ করলে ভুল বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।’