শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্টডাউন। আর মাত্র ন’দিন পরেই বিধানসভা নির্বাচন ত্রিপুরায়। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি তৃণমূল। ইতিমধ্যেই সরগরম রাজনৈতিক আবহ। মঙ্গলবার সকালে ভোট প্রচারে আগরতলায় পদযাত্রায় হাঁটলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুসারেই এদিন বেলা ১২টার কিছু পর আগরতলায় পদযাত্রা শুরু করেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর সঙ্গে পদযাত্রার একেবারে সামনে রয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভূমি-কন্যা তথা তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব। পদযাত্রার শুরু থেকেই যে ভিড় দেখা গিয়েছে তা চোখে পড়ার মতো। পদযাত্রা শেষে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে সভাও করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নতুন প্রজন্ম থেকে মহিলাদের তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলায় যে উন্নয়ন করেছি তার অনেকটা ভাগই ত্রিপুরাবাসী পাবে। বাংলার থেকে ত্রিপুরার দূরত্ব বেশি নয়। বাংলা আর ত্রিপুরা দুই ভাই-বোন।” পাশাপাশি বিজেপিকে একহাত নিয়ে মমতার কটাক্ষ, “সংবিধান, ইতিহাস ভুলিয়ে দিয়েছেন। দেখা যাক, ২০২৪-এ কী হয়! তৃণমূলই ডবল ইঞ্জিন সরকারকে হটাবে। ঘাসকে কখনও শেষ করা যায় না। এখন আমরা বড় বৃক্ষ হয়ে গিয়েছি। এখন আর আমাদের শেষ করা যাবে না।”
পাশাপাশি, দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে মোদী সরকারকে একহাত নেন মমতার। “চারদিন আগেই তো সরকার পড়ে যেত। এলআইসি, বিএসএনএল টিম-টিম করে জ্বলছে। এগুলো নিভে গেলে আর টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। কালো টাকা ফেরত আসেনি।” ত্রিপুরায় উন্নয়নের বার্তা দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, ক্লাস্টার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সহ অনেক কিছু করতে চাই। পাহাড়ি ছেলে-মেয়েদের উন্নয়ন করতে চাই।” সকলকে তৃণমূলে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আবার ভোটের পর আসব। ডবল ইঞ্জিন হয় নাকি সিঙ্গল ইঞ্জিন হয়, সেটা দেখতে আসব। আমরা ত্রিপুরাকে ছাড়ছি না।” ত্রিপুরার ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার বার্তা দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “ত্রিপুরার ছেলে-মেয়েরা যাতে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বাংলায় পায়, তার ব্যবস্থা আমি করব। কারণ বাংলা যদি একটা ঘর হয়, তাহলে ত্রিপুরা আমার আরেকটা ঘর। দু-বছর আগে এখানে মানুষ কথা বলতে পারত না। আজ আপনারা সকলে যে এখানে আসতে পেরেছেন, তার একমাত্র কৃতিত্ব তৃণমূলের।” চাকরি ক্ষেত্রে বেনিয়ম প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “কাজ করতে গেলে কোথাও একটা-দুটো ভুল হতেই পারে, কেউ-কেউ ভুল করেছে। সেটা আইন শাস্তি দেবে। কিন্তু, বাংলায় লক্ষ-লক্ষ মানুষের চাকরি হয়েছে।” এছাড়া, রাজ্য থেকে কর বলে সমস্ত টাকা তুলে নিয়ে যায় বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল নেত্রী।
মমতা জানান, “আগের সিপিএম, আগের কংগ্রেস আর এখন নেই। এখন সিপিএম হল কংগ্রেসের বি টিম। আমরা কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস না করলে বাংলায় আজও পরিবর্তন হত না।” ভোটে জেতার বিজেপি কোনও প্রতিশ্রুতি রাখেনি বলেও তোপ দাগেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বেকারত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মনে করিয়ে দেন, ডবল ইঞ্জিন সরকারের অধীনে সারা ভারতে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে। কিন্তু, বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। মমতার কথায়, বাংলায় হাসপাতালে বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা থেকে নায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ৪০ শতাংশ ছাড়া পাওয়া যায়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, দুয়ারে রেশন, দুয়ারে সরকার সহ বাংলায় ভোটের আগে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি ভোটের পর চালু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় বিগত ১০ বছরে বহু সংখ্যক মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে এবং বর্তমানে বাংলা মডেল হয়ে উঠেছে বলে জানান মমতা। বলেন, বাংলায় পড়ুয়াদের জন্য একাধিক প্রকল্প থেকে সবুজ সাথী থেকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা দেওয়া হয়। তৃণমূল নেত্রী জানান, বাংলায় দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্দির, এমনকি ফুরফুরা শরিফেরও উন্নয়ন করা হয়েছে। অথচ এত বছর ধরে ত্রিপুরায় মাতাবাড়ি মন্দিরের কোনও উন্নয়ন ঘটেনি বলে সে রাজ্যের বিজেপিকে কটাক্ষ করেন মমতা। প্রতিশ্রুতি দেন, বাংলার মতো ত্রিপুরাতেও সকলকে নিঃশর্ত জমির দলিল দেওয়া হবে, উচ্ছেদ করা হবে না কাউকেই।
পদ্মশিবিরের পাশাপাশি, বাম-কংগ্রেসকেও একহাত নেন মমতা। “এদের নির্দিষ্ট কোনও ধারা নেই, বাংলায় ও ত্রিপুরায় আলাদা নীতি”, এমনটা বলে তাদের কটাক্ষ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারকে কটাক্ষ করে মমতার বক্তব্য, “ভোটের সময়ই …