এবার বাংলাজুড়ে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তৈরি হচ্ছে তথ্যভাণ্ডার। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে চালু হচ্ছে ইন্টিগ্রেটেড রোড এক্সিডেন্ট ডেটাবেস (আইআরএডি)। কোথায়, কখন, কীভাবে, কেন দুর্ঘটনা ঘটছে তার যাবতীয় তথ্য জমা হবে সরকারের কাছে। সব তথ্য জানার পর মাদ্রাজ আইআইটি-র তরফে জানানো হবে, ওই এলাকায় মূল সমস্যা কী এবং কীভাবে তার সুরাহা সম্ভব। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ, পরিবহণ, পূর্ত এবং স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই ডেটাবেস তৈরি হবে। ইতিমধ্যেই পুলিশ এবং মোটর ভেহিক্যালস ইনস্পেক্টর বা এমভিআই-দের এবিষয়ে প্রশিক্ষণও হয়ে গিয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটাই হবে ওয়েব বেসড। পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই চণ্ডীগড়ে এই তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার হবে বাংলায়। কেন্দ্রীয় সড়ক-পরিবহণ মন্ত্রকের তরফে দুর্ঘটনা কমাতে প্রত্যেক রাজ্যকে একটি করে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। সেইমতো করেই পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। এবিষয়ে বিশেষভাবে সাহয্য করছেন মাদ্রাজ আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচীতে দুর্ঘটনার হার কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু তারপরও প্রায়দিনই দুই বাসের রেষারেষি থেকে শুরু করে গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনার বলি হন সাধারণ মানুষ। অনেক সময় রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু বেশিরভাগক্ষেত্রেই ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা, তাতে কার গাফিলতি ছিল, এবিষয়গুলো প্রকাশ পায় না। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে সেইমতো ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। ফলে একই জায়গায় বারংবার দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। তা এড়াতেই এই তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হবে বলেই জানাচ্ছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা। দুর্ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেই অঞ্চলে ব্যবস্থা নেবে রাজ্য।
পাশাপাশি পরিবহণ দফতরসূত্রে খবর, এই তথ্যভাণ্ডার চার দফতরে নিজেদের মতো করে দুর্ঘটনার তদন্ত করে তথ্য দেবে। পরিবহণ দফতর দেখবে, যে গাড়িতে দুর্ঘটনা, তার সিএফ থেকে শুরু করে ব্রেক, স্পিডোমিটার-সহ গাড়ির সব যন্ত্রাংশ ঠিক ছিল কিনা। পুলিশ দেখবে, কী কারণে দুর্ঘটনা, কার গাফিলতি ছিল, একই জায়গায় বারংবার দুর্ঘটনা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি। পূর্ত দপ্তরের কাজ দুর্ঘটনাস্থলের রাস্তা ঠিক ছিল কিনা তা দেখার। যদি না থাকে তবে সেই রাস্তা দ্রুত সারাইয়ের ব্যবস্থা করা। আর স্বাস্থ্য দফতর ভাণ্ডারে ইনপুট দেবে দুর্ঘটনায় জখম বা মৃত ব্যক্তিকে হাসপাতালে কোন সময় নিয়ে আসা হয়েছে, তার অবস্থা কী ছিল, তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হল কিনা ইত্যাদি। কলকাতায় পুলিশ কমিশনার এবং প্রত্যেক জেলার জেলাশাসক এই প্রকল্পের নোডাল অফিসার হিসাবে কাজ করবেন। প্রত্যেক দফতরকে তথ্য দেওয়ার জন্য থাকবে ১১টি আলাদা আলাদা ঘর।