অব্যাহত মোদী সরকারের বিমাতৃসুলভ কার্যকলাপ। আবাস যোজনার টাকা নিয়ে চলছে টালবাহানা। কেন্দ্রের অনুমোদন পেলেও এখনও মেলেনি বরাদ্দ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রাজ্যে গ্রামীণ এলাকার গরীব মানুষের জন্য ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮ টি বাড়ি নির্মাণ কীভাবে হবে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর কেন্দ্রীয় গ্রামান্নোয়ন মন্ত্রক এই প্রকল্প রূপায়ণে নিয়ম মেনে, হাজার ২০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা চিঠি দিয়ে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরকে জানিয়েছিল। গত বছরের শেষ দিনের মধ্যেই এই টাকা রাজ্যের জন্য বরাদ্দ হওয়ার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্য সে টাকা পায়নি। নবান্ন সূত্রের খবর, গত ২৪শে নভেম্বর কেন্দ্রীয় গ্রামান্নোয়ন মন্ত্রক এই প্রকল্পের অনুমোদনের কথা রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল। এই চিঠিতে প্রকল্প খরচের ৬০ শতাংশ অর্থ হিসেবে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। সেই মতো বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ রাজ্যকে দিতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বরাদ্দ না করলে তার অংশ দিতে পারবে না রাজ্য।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। এছাড়া নির্মাণ খরচ হিসেবে একশো দিনের গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু শ্রম দিবস দেওয়া হয়। এছাড়াও বাড়িগুলিতে শৌচলয় তৈরি করে দিতে হবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায়। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের হিসেবে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮টি বাড়ি তৈরি করতে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। সেই মতো রাজ্যকে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দিতে হবে। এই টাকার সংস্থান আর্থিক সংকটের মধ্যেও করে রেখেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু কেন্দ্রের টাকাই এখনও এসে পৌঁছায়নি।
উল্লেখ্য, প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে যাতে গড়িমসি না হয়, তাই প্রথম থেকেই রাজ্যকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় পোর্টালে তুলতে হবে। না পারলে ‘কোটা’ অন্য রাজ্যে চলে যাবে। উপভোক্তাদের নামের সঙ্গে আধার সংযোগ ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। কারণ তিন দফায় আধার বেস পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণের টাকা দেওয়া হবে। রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিতর্কের মধ্যে রাজ্য সরকার ত্রিস্তরীয় যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে ফেলে। ৯০ দিন অর্থাৎ ৩১শে মার্চের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ শেষ করার জন্য রূপরেখা তৈরি করে দেয় রাজ্য সরকার। তাতে নির্মাণ কাজে ইঁট, সিমেন্ট সহ নির্মাণ সামগ্রী কীভাবে সংগ্রহ করা হবে, রাজমিস্ত্রিদের প্রশিক্ষণ,এবং তদারকির কাজ আধিকারিকরা কীভাবে করবে তা বিস্তারিত বলা হয়। এমনকী ভালো গুনগতমানের কাজের জন্য প্রশাসনের নীচুতলায় ইনসেনটিভ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম বারো দিন কেটে গেলেও প্রকল্প রূপায়ণের কাজ আরম্ভ করা যাচ্ছে না স্রেফ টাকার অভাবে। ফলত বাড়ছে জটিলতা। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে ঘনীভূত হয়েছে বিতর্ক। মোদী সরকারের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছে একাধিক মহল।