এবার মোদী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণের বিরুদ্ধে স্বর তুলে কাঁথিতে গিয়ে কাজু শিল্প বাঁচাও কমিটি গড়লেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। অর্থাৎ, বিজেপি ও কেন্দ্রীয় এজেন্সির জুলুম থেকে বাঁচতে কাজু শিল্প বাঁচাও কমিটি গড়ে এবার বিদ্রোহের পথে হাঁটছে কাঁথি। বাংলার কাজু শিল্পের পীঠস্থান পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে স্থানীয়রা ছাড়াও মালদহ, মুর্শিদাবাদ-সহ বিভিন্ন জেলার শ্রমিকরা কাজ করেন। বড়-ছোট মিলিয়ে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের রুটিরুজি কাজু শিল্পের উপর নির্ভরশীল। ব্যবসায়ীরা জিএসটি ও অন্যান্য কর দিয়ে নিয়মমাফিক কেনাবেচা করছেন। অভিযোগ, বিজেপির একাংশ শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে নানাভাবে কাজু ব্যবসায়ীদের উপর জুলুম চালাচ্ছে। জিএসটি দিয়ে কাজু ব্যবসা করলেও প্রভাব খাটিয়ে আয়কর অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রকাশ্য জনসভায় হুমকি দিয়ে স্বয়ং বিরোধী দলনেতা বলছেন, এমন অভিযান আরও হবে। শুধু তাই নয়, আয়কর হয়রানি বন্ধের প্রস্তাব দিয়ে বিজেপি থেকে নানাধরণের চাপ দেওয়া হচ্ছে। গত এক বছরে কেন্দ্রীয় এজেন্সি কেন্দ্রিক বিজেপির জুলুমবাজি আরও বেড়েছে বলে বুধবার কাঁথির অরবিন্দ স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে অভিযোগ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কাজু শিল্পে যুক্ত শ্রমিকরাও এসে কুণালকে অভিযোগ করেন। বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহের সুরে শ্রমিকরা বলেন, ‘‘বিজেপির জুলুমে গেরুয়া শিবির লাভবান হলেও ব্যবসায়ীরা চাপে পড়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিলে না খেয়ে মরবো আমরা। কাজু শিল্পের স্বার্থে কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই অত্যাচার বন্ধ না হলে আমরা বাঁচব না।’’ এরপরই কুণালের প্রস্তাব মেনে কাজু শিল্প বাঁচাও কমিটি তৈরি করেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে আপাতত একটি কমিটি গড়ে গেরুয়া জুলুমবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি হয়েছে। এদিন সকালে অরবিন্দ স্টেডিয়ামে প্রথমে চা-চক্রে অংশ নেন এবং পরে কাজু ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কুণাল ঘোষ। দিন কয়েক আগে কাঁথি থেকে দীঘা যাওয়ার পথে পিছাবনি মোড়ে সভা করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। এদিন পালটা জনসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ‘স্মৃতিভ্রষ্ট ইরানি’ বলে কটাক্ষ করলেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘উনি বাংলায় এসে রাজ্য সরকারের যে সমস্ত প্রকল্পের বদনাম করেছেন তার প্রত্যেকটিকেই ওঁর কেন্দ্রীয় সরকার একাধিকবার দেশের সেরা পুরস্কার দিয়েছে। উনি গেরুয়া মঞ্চে উঠে বাংলাকে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের এই পুরস্কারগুলির বিষয়ে স্মৃতিভ্রষ্ট হন।’’ এদিনের সভায় ছিলেন মন্ত্রী অখিল গিরি, সুপ্রকাশ গিরি প্রমুখ। এদিন দুপুরে জনমঙ্গলে কাঁথি সাংগঠনিক জেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত ‘দিদির সুরক্ষা কবজ’ প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, তন্ময় ঘোষ, জেলার তৃণমূলের চেয়ারম্যান অভিজিৎ দাস, সভাপতি তরুণ মাইতি। পাশাপাশি জেলা পরিষদ সভাধিপতি উত্তম বারিক, যুব সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি প্রমুখও উপস্থিত ছিলেন।