বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই রাজ্যকে আরও শিল্পবান্ধব করে তুলতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাংলার কৃষি ও কৃষক সমাজকে বাঁচিয়ে শিল্পের গতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তৎপর রাজ্য। সেই সূত্রেই নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে চালু হয়ে গেল শিল্পসাথী পোর্টাল। ওয়েস্টবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শিল্প উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করার জন্য যে প্রকল্পটি শুরু হয় তা শিল্পসাথী প্রকল্প নামে প্রচলিত। সেই প্রকল্পের নামেই এবার একক উইন্ডো পরিষেবা পোর্টাল চালু হয়ে গেল। এই পোর্টালের মাধ্যমে রাজ্যের বুকে ক্ষুদ্র শিল্প বা ব্যবসা শুরু করার জন্য উৎসাহিত করা হবে। একাধিক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নতুন কোনও ব্যবসাঅবা শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারি অনুমোদন। অনেকেই জানেন না, ঠিক কোন পদ্ধতিতে এগোলে ব্যবসা বা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় লোন মিলবে। জানেন না, কোথায় কীভাবে আবেদন করলে তা অনুমোদন পাবে। এই সমস্যারই সমাধান করবে শিল্পসাথী পোর্টাল। যদি কারও কোন ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছা থাকে নিজের বাড়ি থেকেই এবং প্রয়োজনীয় গাইডেন্সের জন্য আটকে রয়েছেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এই পোর্টালের সাহায্য নেওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই পোর্টাল চালুর পিছনে রয়েছে বাংলার বেকার যুবকদের স্থানীয়ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থাপনে উৎসাহ প্রদান, গ্রামবাংলার শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সাধন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের বাংলায় বিনিয়োগের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা, খুব অল্প সময়ে ব্যবসার শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্র সহ লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং বাংলার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের জন্য সাহয্য করার মতো উদ্দেশ্য। ‘শিল্পসাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকার বেকার যুবক-যুবতীদের ঋণ প্রদান করে ব্যবসা শুরু করার জন্য বা ক্ষুদ্র বা কুটির শিল্পের স্থাপনার জন্য। এবার থেকে সেই সব ঋণ ও ব্যবসা শুরু কিংবা শিল্প স্থাপনের জন্য যাবতীয় আবেদন বাড়িতে বসেই করা যাবে এই পোর্টালের মাধ্যমে। আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলার স্থায়ী বাসিন্দা তথা ভারতবর্ষের নাগরিক হতে হবে এবং পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও প্যান কার্ডের ফটোকপি দিতে হবে। এছাড়াও আবেদনকারীর জন্মের প্রমাণপত্র, মাধ্যমিকের অ্যাডমিট জমা দিতে হবে। আবেদনকারীকে যে কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান বা স সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণীতে পাস হতে হবে। আবেদনকারীর যদি কাস্ট সার্টিফিকেট থাকে তাহলে সেই সেই কাস্ট সার্টিফিকেটের ফটোকপি লাগবে। সমস্ত আবেদনকারীর বর্তমানে পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফ লাগবে।
পাশাপাশি, আবেদনকারীর নূন্যতম বয়স ১৮ হতে হবে এবং ৫০ বছরের বেশি হওয়া চলবে না। আবেদনকারীর নাম অবশ্যই এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। আবেদন করা যাবে অনলাইন ও অফলাইন দুই পদ্ধতিতেই। অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রথমে আপনাকে শিল্পসাথী প্রকল্পের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https://www.silpasathi.in/ তে আসতে হবে। যদি আপনি এই ওয়েবসাইটে প্রথমবার আসেন তাহলে আপনাকে আপনার মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের পর ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে হবে। এরপর, শিল্পসাথী প্রকল্পের ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে এবং কোন শিল্পের জন্য আবেদন করছেন সেটাও জানাতে হবে। কত টাকা ঋণ নিতে চাইছেন সেটি জানাতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করে সাবমিট অপশনে ক্লিক করে অ্যাপ্লিকেশনটি সাবমিট করবেন। আর যদি অফলাইনে করতে চান তাহলে সবার আগে অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি এ-ফোর সাইজের সাদা কাগজে প্রিন্ট আউট করে নিয়ম অনুযায়ী অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে। তারপর তাতে আবেদনকারীর বর্তমানের রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফ সহ প্রয়োজনীয় নথিগুলি ফর্মের সঙ্গে জুড়ে দিতে হবে। এরপর আবেদনকারীকে ফর্মে সই করে গিয়ে জমা করতে হবে বিডিও বা এসডিও-র দফতরে।