মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রইল জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ। প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসক ইংরেজিতে কী লিখেছিলেন তা বুঝতে পারেননি গ্রামবাসীরা। ডাক্তার যে বড় হাসপাতালে রেফার করেছেন তা বুঝতে না পেরে পথ দুর্ঘটনায় আহত তরুণকে তারা বাড়ি নিয়ে চলে যায়। অভিযোগ, এরফলে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে রাতে মৃত্যু হয় ওই তরুণের। রবিবার বড়দিন উপলক্ষে বাইক নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল রাজগঞ্জের পানিকৌড়ি গ্রামের বছর আঠারোর মহিন রায়। সঙ্গে এক বন্ধুও ছিল। বাইক চালিয়ে দিদির বাড়ি চলে যায় ওই তরুণ। ফেরার পথেই বাইক দুর্ঘটনায় আহত হয় দু’জনেই। গ্রামবাসীরা তাদের উদ্ধার করে রাজগঞ্জ মগরাডাঙি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার সময় শারীরিক পরিস্থিতি বিশেষ ভাল নয় বলে বড় হাসপাতালে রেফার করে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তিনি প্রেসক্রিপশনে লেখেন- Refered to higher center. সঙ্গে হাঁটুর এক্সরে ও তলপেটের আল্ট্রা সোনোগ্রাফির কথাও বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, সাধারণ গ্রামবাসীর পক্ষে ‘Refered to higher center’-এর বাংলা বোঝা সম্ভব হয়নি। সোমবার তাঁরা দাবি করেন, চিকিৎসক মুখে জেলা হাসপাতাল বা উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেননি। তাই ভালো আছে ভেবে মহিন ও তার বন্ধুকে বাড়ি নিয়ে চলে আসেন গ্রামবাসী ও পরিজনরা। কিন্তু রাতে হঠাৎই মহিনের সারা শরীরে প্রবল ব্যথা হতে থাকে। সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে। এলাকার এক হাতুড়ে চিকিৎসককে ডেকে আনা হয়। তিনি এসে অবস্থা খারাপ দেখে ওই তরুণকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। দ্রুত পরিজনরা ওই তরুণকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন মৃত তরুণের পরিজনরা। মৃত মহিন রায়ের বাবা রতন রায়ের অভিযোগ, মগরাডাঙি গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ছেলের সঠিক চিকিৎসা করেননি। না হলে মহিন বেঁচে যেত বলেই দাবি তাঁর। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সোমবার সকালে মগরাডাঙি গ্রামীণ হাসপাতালে এসে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানান। খবর পেয়ে ছুটে আসেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়। তিনিও সব শুনে ওই চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানান। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই ফোন করে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি সুশান্ত রায়কে এই বিষয়ে অভিযোগ জানান। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মহিনের মৃতদেহ।