মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্রমশ অন্ধকারের দিকে এগিয়েছে দেশের অর্থনীতি। একাধিক ক্ষেত্রেই তা প্রকট হয়ে উঠেছে। টাকার দামে পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে বারবার। মূল্যবৃদ্ধির কোপও ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে জনজীবনকে। এবার দেশের আর্থিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে একহাত নিলেন রিজার্ভ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর তথা অধুনা হার্ভার্ডের অর্থনীতির অধ্যাপক রঘুরাম রাজনে। বললেন, “আগামী পাঁচ বছর দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি পাঁচ শতাংশ হলেও নিজেদের ভাগ্যবান মনে করব।” বরাবরই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে মোদী সরকারের বিরাগভাজন হয়েছেন রাজন। তারই মাঝে দু’দিন আগেই রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় পা মিলিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, রাহুল গান্ধীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রঘুরাম রাজন বলেন,”বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ দর (পড়ুন রেপো রেট) বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে রপ্তানির পরিমাণ। আগামী বছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হতেও চাপে পড়তে হবে ভারতের অর্থনীতিকে। যদি সেটা হয়, তাহলেও আমাদের নিজেদের ভাগ্যবান মনে করা উচিত।” রাজন বলেছেন, “জিডিপি বৃদ্ধির হারে সমস্যা হল, আপনি কীসের ভিত্তিতে সেটা মাপছেন, তার উপর নির্ভর করে এটা কতটা ভাল। ধরুন, গত বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে আপনি বিশ্রী পারফর্ম করেছেন। তার ভিত্তিতে দেখলে খুব ভাল মনে হবে। কিন্তু আপনাকে হিসাব করতে হবে ২০১৯ সালের নিরিখে। সেই হিসাবে গেলে আমরা বছরে মাত্র ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করছি। যা ভারতের মতো দেশের কাছে মোটেই ভাল নয়।”
উল্লেখ্য, কেন্দ্রের তরফে করোনা অতিমারী উত্তর সময়ে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে বারবার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতরমণও লোকসভায় দাঁড়িয়ে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে সদ্য একই দাবি করেছেন। কিন্তু রাজন মনে করছেন, মুদ্রাস্ফীতি দেশের জন্য অত্যন্ত জটিল একটি সমস্যা। আর্থিক বৃদ্ধির পথে তা ফের বাধা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাজনের স্পষ্ট কথা, কোভিড সমস্যা একটা কারণ বটে। তবে ভারতের অর্থনীতি কোভিডের আগে থেকেই পিছিয়ে পড়ছিল। তার কারণ হল সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত সংস্কার করতে না পারা। অর্থনীতির বৃদ্ধির জন্য যে যে সংস্কার দরকার ছিল, সরকার সেটা করতে পারেনি। চলতি বছরের থেকেও আগামী বছরটি দেশের জন্য আরো জটিল হতে চলেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অর্থনীতির অধ্যাপক। বৃদ্ধির গত আরও ধীর বলে পূর্বাভাস তাঁর। বাড়বে সুদের হার। যার ফল ভোগ করবেন সাধারণ মানুষ। এমনই পূর্বাভাস দিয়েছেন আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর। স্বাভাবিকভাবেই এর পর শুরু হয়েছে গুঞ্জন। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্র।