বঙ্গোপসাগরে ফের ঘনীভূত হচ্ছে নিম্নচাপ। যার জেরে ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মনদৌস’। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে জমাট বাঁধতে থাকা নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এমন নাম দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বিশ্ব আবহাওয়া দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে কোনও না কোনও দেশ এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে। সেই পর্যায়ক্রমেই ‘মনদৌস’ নামকরণটি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাশাহি। নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে, তবেই এই নাম কার্যকর হবে। আরবি ভাষায় ‘মনদৌস’ শব্দের অর্থ ‘গয়নার বাক্স’। কিন্তু এই ‘গয়নার বাক্স’ খুললে তা অশুভ ইঙ্গিত ডেকে আনবে বলেই প্রমাদ গুনছেন আবহবিদরা। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার দিনেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া সুগভীর নিম্নচাপ। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পুদুচেরির উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতেই এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বেশি পড়বে বলে আবহবিদরা জানিয়েছেন। মৌসম ভবনের তরফে ৮ই ডিসেম্বর ১৩টি জেলা এবং ৯ই ডিসেম্বর ১২টি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করেছে। চেন্নাই, কাঞ্চিপুরম, তিরুভাল্লুর এবং চেঙ্গলপেট জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এপ্রসঙ্গে চেন্নাইয়ের হাওয়া অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেল এস বালাচন্দ্রন বলেন, ‘‘৭ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তামিলনাড়ু, পুদুচেরি এবং কারাইকালের বেশির ভাগ জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে৷’’ সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে পশ্চিম থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে তা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এই নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
উল্লেখ্য, এর পর এই নিম্নচাপ আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ৮ই ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে উত্তর তামিলনাড়ু-পুদুচেরি এবং পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কুড্ডালোর এবং মায়িলাদুথুরাই জেলায় বুধবার থেকেই ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। ৮ই ডিসেম্বর উত্তর তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ৯ই ডিসেম্বর তিরুপত্তুর, কৃষ্ণগিরি, ধর্মপুরী এবং সালেম এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে। মৌসম ভবন আরও জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতেও। সেখানেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে ৭ই ডিসেম্বর। আলিপুর হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া সুগভীর নিম্নচাপের কারণে বাংলার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়বে।।নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় উত্তুরে হাওয়ায় বাধা পড়বে। ফলে ফের বাংলা থেকে কিছু দিনের জন্য ম্লান হতে পারে শীতের আমেজ। বাড়তে পারে তাপমাত্রা। ঘূর্ণিঝড়ের আবহ কাটলেই আগামী সপ্তাহে বাংলার আবার শীতের দেখা মিলবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। প্রসঙ্গত, অক্টোবর মাসেই আন্দামান সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলা উপকূলের দিকে ধেয়ে এসেছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সিত্রাং’। প্রথমে বাংলার দিকে ধেয়ে এলেও পরে এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের দিকে ঘুরে যায়। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে সিত্রাং-এর প্রভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিপুল। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল। ‘সিত্রাং’-এর থেকে ‘মনদৌস’-এর শক্তি আরও বেশি হতে পারে বলেই অনুমান বিশেষজ্ঞদের। নিম্নচাপের গতিপ্রকৃতি দেখে এমনই মনে করছেন তাঁরা। আর এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি কবলে পড়তে পারে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পুদুচেরির বিস্তীর্ণ এলাকা।