রাজনৈতিক ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেননি মোদী-শাহরা। গেরুয়া শিবিরের বাংলা জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। অন্য দিকে নীতিশ কুমার এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই হাতছাড়া হয়েছে বিহার। এবার তাই ঘুরপথে ‘বদলা’ নিতে চায় মোদী সরকার! দুই রাজ্যের কিছু অংশ নিয়ে এবার নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের কাজ শুরু করল তারা! যদিও তা প্রকাশ্যে নয়। সূত্রের খবর, চুপিসারে বঙ্গভঙ্গের প্রাথমিক তোড়জোড় চালাচ্ছে দিল্লী। সর্বভারতীয় একটি দৈনিকে তথ্যটি ফাঁস হতেই তীব্র বিরোধিতা করেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষের অভিযোগ, বিজেপি পরাজয় হজম করতে পারছে না বলেই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে চক্রান্ত করে বঙ্গভঙ্গের কথা ভাসিয়ে দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বাংলা ও বিহার, এই দুই রাজ্য এখন বস্তুতই বিজেপির কাছে কঠিন জমি। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারে নীতিশ কুমার-তেজস্বী যাদব জুটি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে মোদীর অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়ে দেওয়ার জন্য এই ত্রয়ীই যথেষ্ট। আর সেটা আঁচ করেই নয়া চাল চেলেছে গেরুয়া শিবির। অমিত শাহর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক গোপনে শুরু করে দিয়েছে দুই রাজ্য ভেঙে নয়া কেন্দ্রশাসিত রাজ্য গঠনের প্রস্তুতি। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি শাহ বিহার সফরে গিয়ে বাংলা লাগোয়া বিহারের আদিবাসী অধ্যুষিত কিষানগঞ্জ-সহ তিনটি জেলায় যান। তার বেশ কয়েকমাস আগে উত্তরবঙ্গ সফর করে গিয়েছেন। দুই রাজ্যেই রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি তিনি প্রশাসনিক বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, আসলে তলায় তলায় বাংলা ও বিহারকে ভাগ করে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সফর।
পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পরে বাংলা থেকে উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার দাবি তুলছিল পদ্ম শিবির। বিজেপির সাংসদ ও বিধায়করা হামেশা দ্বিতীয়বার বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সওয়াল করে আসছিলেন। বারবার এই বিতর্ককে ঘিরে বিস্তর জলঘোলাও হয়েছে, সরগরম হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। উলটোদিকে এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার জানিয়েছেন, কোনওভাবেই বাংলাকে ভাগ হতে দেবেন না। প্রয়োজনে প্রাণ দিয়ে বঙ্গভঙ্গ রদ করবেন। উদ্যোগের বিরোধিতা করে বামেরাও।
অভিযোগ, এমতাবস্থায় রাজনৈতিকভাবে মানুষের সমর্থন নিয়ে বাংলা দখল অধরা থেকে যাবে বুঝেই শাহ-নাড্ডারা ঘুরপথে বঙ্গের একাংশ দখলের ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। তাদের পরিকল্পনা মতই উত্তরবঙ্গ ও রাঢ় বাংলার ৮০টি বিধানসভার সঙ্গে বিহারের কিষানগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহার এবং পূর্ণিয়ার ৪০টি বিধানসভা নিয়ে নবম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যদিও যুক্তি সাজাচ্ছে যে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী রুখতেই নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু ইতিমধ্যে এর পিছনে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। একই মত পোষণ করেছে বিরোধীরাও। তাদের মতে, আসলে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে রেখে ঘুরপথে বাংলা ও বিহার দখলের কৌশল নিয়েছে গেরুয়া শিবির। আগামী নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।