মোদী জমানার শুরু থেকেই দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অভিযোগ করে আসছে, নানা ক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শিক্ষায় হিন্দি আগ্রাসন এবং হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে। সেই অভিযোগ যে মোটেই ভ্রান্ত নয়, এবার ফের মিলল তার প্রমাণ। ভোপালে এক অনুষ্ঠানে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান হালকা চালে বলেছিলেন, চিকিৎসকরা চাইলে হিন্দিতে প্রেসক্রিপশন লিখতে পারেন। প্রেসক্রিপশনের মাথায় আরএক্স-এর (ল্যাটিন ভাষা থেকে উদ্ভূত একটি প্রতীক চিহ্ন) বদলে ‘শ্রী হরি’ লেখার প্রস্তাবও দেন তিনি। এরপরেই সতনা জেলার কোটার গ্রামের এক সরকারি চিকিৎসক ঠিক সেই কাজটাই করে বসলেন। প্রস্তাবিত ওষুধের নাম লিখলেন হিন্দি হরফে, মাথায় রইল ‘শ্রী হরি’। এর ফলে এক মহা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তা হল, এখন যদি তামিল চিকিৎসকরা তামিল ভাষায় এবং বাঙালি চিকিৎসকরা বাংলায় প্রেসক্রিপশন লেখেন তা হলে কী হবে?
কোনও বাঙালি চিকিৎসকের কাছে নিশ্চয়ই শুধুমাত্র বাঙালি রোগীরাই চিকিৎসা করাতে আসেন না। একইভাবে তামিল চিকিৎসক নিশ্চয়ই শুধু তাঁর ভাষার রোগীরই চিকিৎসা করেন না। এই অতি জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রত্যেকে যদি নিজের নিজের ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করে তবে তো মহা বিপদ। প্রেসক্রিপশন ইংরেজিতে লেখাই দস্তুর। এক একটি ওষুধের নাম, তার মধ্যে কী কী উপাদান আছে তা ইংরেজি ভাষা ছাড়া বোঝা অসম্ভব। সে কারণেই দেশ জুড়ে চিকিৎসা শাস্ত্র পড়ানো হয় ইংরেজি ভাষাতেই। আচমকা এমবিবিএসের প্রথম বর্ষের পাঠ্যবই হিন্দিতে প্রকাশ করেছেন অমিত শাহ। গন্ডগোলের শুরু সেখান থেকেই। শাহ অ্যানাটমি বা শারীরবিদ্যার একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। বইয়ের প্রচ্ছদে অ্যানাটমি শব্দটিই হিন্দি হরফে লেখা রয়েছে, যা অত্যন্ত হাস্যকর। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলির পরিভাষা ইংরেজিতেই লেখা পড়া এবং জানা হয়। তার না হিন্দি, না বাংলা আর না তামিল অনুবাদ সম্ভব। শুধুমাত্র হিন্দি হরফে তা লেখার বা পড়ার ধারণাটাই উদ্ভট।