অপেক্ষার আর মাত্র কিছুদিন। তারপর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। প্রত্যেকটি মানুষ সারাবছর অপেক্ষা করে এই চারটি দিনের জন্য। ইতিহাস আর জনশ্রুতিতে মোড়া পুজো দেখতে ভালোবাসলে চলে আসা যেতেই পারে জঙ্গল ঘেরা কনক দুর্গা মন্দিরে। আর মন্দিরের সামনেই চোখে পড়ে যাবে ময়ূর। পা ভেজাতে পারেন ডুলুং নদীতেও। এই পুজো প্রায় ৪৩৬ বছরের প্রাচীন। মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ। কথিত আছে, স্বপ্নাদেশে পুজোর নির্দেশ পেয়েছিলেন রাজা। দেবী মূর্তি কেমন হবে, তারও ছিল স্বপ্নাদেশ। দেবীর আদেশ মেনে ৩ রানির সোনার কঙ্কন থেকে মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল বলে এই দেবীর নাম কনক দুর্গা। কথিত, দেবী ছিলেন নীল বসনা। অবশ্য মন্দির থেকে মূর্তি চুরি গিয়েছে দু’বার। এখন দেবী প্রতিমা অষ্টধাতুর। এখানে দেবী চতুর্ভুজা। ওপরের ডান হাতে রয়েছে খড়গ। আর বাম হাতে পানপাত্র। নিচের বাম হাতে ঘোড়ার লাগাম। আরে ডান হাতে রয়েছে বরাভয় মুদ্রা। এখানে দেবীর বাহন ঘোড়া।
শোনা যায়, কোন স্যাঁকরা প্রতিমা তৈরি করবেন সেই নির্দেশও দিয়েছিলেন দেবী। প্রতিমা তৈরি করেছিলেন যোগেন্দ্র কামিল্যা। প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজপুরোহিত রামচন্দ্র ষড়ঙ্গী। কথিত আছে, রাজা, শিল্পী এবং রাজপুরোহিত স্বপ্নে দেখতে পেয়েছিলেন দেবীর একই রূপ। সেই রূপই ফুটে উঠেছে। মন্দিরে আজও পুজো করেন রাজ পুরোহিতের বংশধর। আরও জনশ্রুতি, আগে পুজোতে এখানে নরবলি হত। যতক্ষণ না রক্ত বয়ে গিয়ে ডুলুং নদীতে গিয়ে পড়ত ততক্ষণ হত বলি। পরে দেবীর আদেশেই না কি বন্ধ হয়ে যায় এই প্রথা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, অষ্টমীর দিন ভোগ রান্না করেন স্বয়ং দেবী। তবে প্রাচীন পঞ্চরত্ন মন্দির জরাজীর্ণ। ওই মন্দিরের পাশেই নতুন করে মন্দির নির্মাণ করেছেন রাজা জগদীশচন্দ্র দেও ধবল দেব। নতুন মন্দিরেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেবীকে। রাজ্যসরকার এই মন্দিরের সংস্কারের জন্য বরাদ্দ করেছে টাকা। হয়েছে সৌন্দর্যায়ন।