বহু দিন ধরেই বেসুরো ছিলেন তিনি। এনডিএ-র সবথেকে বড় শরিক হলেও বারবারই বিজেপির সঙ্গে তাঁর দল জেডিইউ-এর মতানৈক্য সামনে এসেছিল। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নীতি আয়োগের বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই জোরাল হয় গুঞ্জন। অবশেষে মঙ্গলবারই সত্যি হল জল্পনা। ভেঙে গেল বিজেপি-জেডিইউ জোট। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নীতিশ কুমার।
প্রসঙ্গত, নীতি আয়োগের বৈঠক ঘিরে জল্পনা বাড়লেও ভাঙনের সূত্রপাত অনেক দিন ধরেই। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপির প্রতি নীতিশের অসন্তোষ নিয়ে কানাঘুষো সামনে আসতে থাকে। নির্বাচনের ফল সামনে আসতে দেখা যায়, জেডিইউ পেয়েছে তৃতীয় স্থান। ১ নম্বরে ছিল তেজস্বীর আরজেডি। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলেও ফলাফলে যে নীতিশ খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না, তেমনটাই মনে করে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। জেডিইউয়ের একাংশ মনে করেছিল, তাঁদের হাতে থাকা আসনগুলিতেই প্রার্থী দিয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে বিজেপি।
যে বছর বিহারে ক্ষমতায় এল জোট সরকার। ওই বছরেই অরুণাচল প্রদেশে জেডিইউয়ের ছয় বিধায়ক যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। এটা যে কোনও জোট রাজনীতির ধর্ম হওয়া উচিত নয়, তেমনটাই মত ছিল জেডিইউ নেতাদের। শরিক দলের বিধায়কদের কেন এ ভাবে দলে নেওয়া হবে? সেই প্রশ্ন তুলেছিল নীতিশের দল। শুধু তাই নয়। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কয়েক মাস পরই একটি দলীয় বৈঠকে নীতিশ বলেছিলেন, ‘আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনও ইচ্ছা ছিল না। আমার ওপর চাপ ছিল বলেই এই পদ গ্রহণ করেছি। বিজেপি তাদের দলের কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতেই পারে।’
আবার মধ্যপ্রদেশে বিয়ের পর ধর্মান্তকরণ বিরোধী বিল পাসের সিদ্ধান্তকেও ভাল চোখে দেখেনি নীতিশের জেডিইউ। বিহারে জোট সরকারে থাকা সত্ত্বেও জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী বলেছিলেন, লাভ জিহাদের নামে ঘৃণা আর বিভেদের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে বিহারে যখন কার্যত আগুন জ্বলছে। তখনও চুপ ছিলেন জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ। তাঁর দলের বর্ষীয়ান নেতারা দাবি করেছিলেন, বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে কথা বলুক কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই যোজনায় যে নীতিশ খুব একটা খুশি ছিলেন না, তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায়।
মাস কয়েক আগে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিল লালুপ্রসাদের আরজেডি। নীতিশ কুমারকে আমন্ত্রণ করতে ভোলেননি তেজস্বী যাদব। সেই পার্টিতে তেজস্বীর পাশে বসে নীতিশ কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও ছিলেন না নীতিশ। শুধু তাই নয়, গত ১৭ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে যে বৈঠক ডেকেছিলেন, সেখানেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। অবশেষে সব জল্পনাকে সত্যি করেই বিজেপির সঙ্গে জোটে ইতি ঘটালেন তেজস্বীর ‘চাচা’।