সদা সর্বদা ব্যস্ততম রেলস্টেশন হল হাওড়া। প্রতিদিন জীবিকার তাগিদে ছুটছে মানুষ। হাওড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন, প্লাটফর্ম সংখ্যা ও ব্যস্ততার নিরিখে ভারতের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে স্টেশন। ১৬৮ বছরের পুরনো এই স্টেশনটির প্ল্যাটফর্ম সংখ্যা ২৩টি ও রেলপথ ২৬টি। ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রান্তকেই রেলপথে সংযুক্ত করেছে এই স্টেশন। শুধু তাই নয়, প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ এই স্টেশনের মাধ্যমেই পৌঁছে যান নিজেদের গন্তব্যে। একটা সময়ের একরত্তি এই স্টেশন কার্যত মহীরুহে পরিণত হয়েছে এখন। এমতাবস্থায়, চলতি বছরের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের ঠিক প্রাক্কালেই এক ঐতিহাসিক নিদর্শন মিলল হাওড়া স্টেশনে। সম্প্রতি মাটি খুঁড়ে প্রায় ১৬২ বছরের পুরোনো রেল লাইনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে সেখানে। মূলত, ১৮৫৪ সালের ১৫ অগাস্ট হাওড়া থেকে শুরু হওয়া শ্রীরামপুর পর্যন্ত মোট ৯১ মিনিটের ঐতিহাসিক রেল যাত্রা স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এমতাবস্থায়, হাওড়া স্টেশনে তৈরি হওয়া নয়া মেট্রো স্টেশনের পথ বানাতে গিয়েই খোঁজ মিলেছে সেই লাইনের। ১৮৫৪ সালের ১৫ আগস্ট রেল চলাচল শুরু হওয়ার ৯৩ বছর পরে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত। ঘটনাচক্রে সেই স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ বছর পালনের আগেই খোঁজ মিলল ঐতিহাসিক লাইনটির। এমতাবস্থায়, এই লাইনটিকে উদ্ধার ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই খুশি হয়েছেন রেল গবেষকদের পাশাপাশি পূর্ব রেলের আধিকারিকরা। এই প্রসঙ্গে মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “আমরা উদ্ধার হওয়া ওই অংশটিকে ইতিমধ্যেই সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করছি। হাওড়া রেল মিউজিয়ামে সেটিকে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।”
প্রসঙ্গত, বর্তমানে হাওড়া স্টেশন তৈরির আগে ছিল একটি গির্জা। মাত্র একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ১৮৫৪ সালে রেল চলাচল শুরু হয়ে এখানে। এক্কেবারে প্রথম দিকে সেখানে ছিল লাল ইটের একটি একতলা বাড়ি। যেটির একটি ছোট জানালা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হত যাত্রীদের। সেই সঙ্গে ছিল কিছু টিনের ঘর এবং একটি স্টোর রুম। আর ওই টিনের ঘরগুলি ব্যবহৃত হত ইঞ্জিন মেরামতের কারখানা হিসেবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হাওড়া স্টেশনের বর্তমান বাড়িটির কাজ শুরু হয়ে ১৯০১ সালে। পাশাপাশি, তা শেষ হয় ১৯০৬ সালে। এদিকে, উদ্ধারকৃত লাইনটি এই স্টেশনের তৃতীয় প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও, আজ সেখানে রয়েছে গুডস শেড। আর এর নিচ দিয়েই মেট্রো চলাচলের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, হাওড়া স্টেশনের ১৭ নম্বর লাইনটিই হল এই স্টেশনের প্রথম লাইন। এখন সেখানে শুধু পার্সেল গাড়ি আসে। এদিকে, এই স্টেশনে তৎকালীন যুগে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রধান ভরসা ছিল গঙ্গা। সেই কারণে রেলের টিকিট কাউন্টার তৈরি করা হয় আর্মেনিয়ান ঘাটে। টিকিট কাটার পর যাত্রীদের রেল কোম্পানির লঞ্চে করে স্টেশনের এইপারে নিয়ে আসা হত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ওই সময়ে লঞ্চের ভাড়া রেলের ভাড়ার সঙ্গেই যুক্ত থাকত।