মক্কার শাসন ক্ষমতার দখলদারি নিয়ে আজ থেকে ১৩৬৫ বছর আগের ওই অসম যুদ্ধে হুসেন ও তাঁর সঙ্গী মিলে মোট ৭২ জন নিহত হন। ওই ঘটনার পর মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মহরমের আশুরা উদযাপন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেই থেকে আজও পালিত হয় মহরম। ইসলামী ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহরমের। ইসলাম ধর্ম মতে অত্যন্ত পবিত্র এই মাস, অবশ্য শোকের মাস হিসেবেই বেশি পরিচিত শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে। ৯ দিন ধরে শোক পালনের পর দশম দিনে পালিত হয় আশুরা, যা মহরম হিসেবেই বেশি পরিচিত। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন ধর্মগুরু হুসেইন-এর মৃত্যুতে শোক পালন করে থাকেন। মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ হাজারদুয়ারীর সামনেই অবস্থিত ইমামবাড়া। সারা বছর আম জনতার জন্য বন্ধ থাকলেও মহরম উপলক্ষে মাত্র দশ দিনের জন্য খুলে দেওয়া হয় ইমামবাড়া দরজা। এ বছর ১০ অগাস্ট পালিত হবে মহরম। গত দু’বছর কোভিডের জন্য বন্ধ ছিল প্রকাশ্যে মহরমের শোক পালন। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় দীর্ঘ দু’বছর পরে মহরম পালিত হবে ইমামবাড়া-সহ লালবাগে। বর্তমানে ৯ দিনের শোক যাপন চলছে। দশম দিনে হবে মহরম শোকের দিন। ছোটে নবাব রেজা আলি মির্জা-সহ অনেকেই এই ৯ দিন ধরে শোক জ্ঞাপনে অংশ গ্রহণ করেছেন। লাঠিখেলা, মর্সিয়া গান গেয়ে, বুক চাপড়ে, তাজিয়া ও যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ‘কারবালা’র ময়দানে যাওয়া হয়।
সব শেষে ক্ষীর-খিচুড়ি বিতরণ করার মতো বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহরম মাসের দশম দিনে আশুরা পালন করে। আরবি ভাষায় আশুরা মানে দশম। মহরম উৎসবকে সামনে রেখে প্রতি বছর এশিয়ার সর্ববৃহৎ মুর্শিদাবাদের নিজামত ইমামবাড়ার সামনে অর্থাৎ হাজারদুয়ারির সামনের ফাঁকা মাঠে মহরমের মেলা বসে। এই মেলা মূলত মহরম মাসের ৬ থেকে ১১ অগাস্ট পর্যন্ত চলে। তবে করোনার মহামারীর কারণে গত দু’বছর কোনও মেলা হয়নি এবং ইমামবাড়ার ভেতরেও বহু বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে মহরম উৎসব পালন করা হয়েছিল। কথিত আছে, ইরাকের ফুরাৎ নদীর তীরে কারবালার ময়দানে মাওবিয়ার ছেলে এজিদের সঙ্গে হজরত মহম্মদের নাতি ইমাম হুসেনের যুদ্ধও হয় আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে ৬১ হিজরির মহরম মাসের ১০ তারিখে। নবাবদের বংশধররা বরাবরের মতো এবারও হাজারদুয়ারি প্যালেস লাগোয়া ইমামবাড়া থেকে বুক-পিঠ চাপড়ে, ‘হায় হাসান! হায় হোসেন!’-এর মতো শোকগাথা গেয়ে, মাতম তুলে, খালি পায়ে টানা ছ’ঘণ্টা পায়ে হেঁটে, তাজিয়া, নিশান, যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে পৌঁছবেন চার কিলোমিটার দূরের আমানিগঞ্জে কারবালার মাঠে। উল্লেখ্য, বছরে শুধুমাত্র এই দশ দিন সর্ব সাধারণের জন্য খোলা থাকে মুর্শিদাবাদের নিজামত ইমামবাড়ার দরজা। পর্যটকেরা যদি ইমামবাড়ার ভেতরের জিনিসগুলো দেখতে চান, তবে তাদের আসতে হবে এই দশ দিনের মধ্যে।
![ফের নবাবের শহরে মহরমের প্রস্তুতি! – দু’বছর পর খোলা হল ইমামবাড়ার দরজা, প্রবেশ অবাধ](https://ekhonkhobor.com/wp-content/uploads/2022/08/WhatsApp-Image-2022-08-06-at-11.32.21-AM-2.jpeg)