মুখ্যমন্ত্রী হবার পর বরাবরই বাংলার পর্যটনশিল্পকে উন্নীত করতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার পর্যটন বিকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজ্যের নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরতে চায় নবান্ন। সেই লক্ষ্যে প্রতিটি জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে তন্তুজ, মঞ্জুষা, বিশ্ববাংলা এবং বাংলার হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত গ্রামীণ স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য স্টল বা শো-রুম তৈরি করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে সোমবার জেলাশাসকদের নির্দেশ দিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। দোকান ঘর বা শোরুম তৈরির উপযুক্ত জায়গা না পেলে কিয়স্কের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে চিঠিতে। নবান্ন সূত্রে খবর, ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে জেলাশাসকদের স্থান নির্বাচন করে পর্যটন ও ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুঠির শিল্প দফতরের সচিবের কাছে বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। নবান্নের কর্তাদের মতে,এবার পুজো অক্টোবরের গোড়ায়। তাই সেপ্টেম্বর শেষ থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হবে। তাই তার আগেই রাজ্যের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে অন্তত পনেরো-কুড়িটি হস্তশিল্প, হ্যান্ডলুমের স্টল বা কিয়স্ক কীভাবে চালু করা যায়, তা বিশেষভাবে দেখতে হবে। রাজ্যের বা ভিন রাজ্যের ও বিদেশী পর্যটকরা বেড়াতে এসে রাজ্য ও পর্যটন কেন্দ্রের ঐতিহ্যের স্মারক সংগ্রহ করতে পারেন। এর একটা ভালো বাজার রয়েছে। রাজ্যের বহু পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। যা স্থানীয় লোকশিল্পের মধ্যে ধরে রাখা রয়েছে। এজন্য পঞ্চায়েত দপ্তরের অধীনে আনন্দধারা প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেও কিয়স্ক দিয়ে পর্যটন কেন্দ্রে স্থায়ীভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
প্রসঙ্গত, জেলাশাসকদের লেখা চিঠিতে মুখ্যসচিব রাজ্যের ২০টি জেলার প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র ধরে ধরে শোরুম বা কিয়স্ক তৈরির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। নবান্ন সূত্রে খবর, আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁ, বক্সা জঙ্গল, রাজভাতখাওয়া, বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর, শুশুনিয়া পাহাড়, বিষ্ণুপুর মন্দির, বীরভূমের রাঙা বিতান, তারাপীঠ, শক্তিপীঠ, মাইথন বাঁধ, মেসেঞ্জার বাঁধ, কোচবিহারের রাজবাড়ি, মদনমোহন মন্দির, দার্জিলিংয়ের টাইগার হিল, মিরিক, কার্শিয়াং, হুগলি, তারকেশ্বর মন্দির, চন্দননগর বাস স্ট্যান্ড, হাওড়ার বেলুড়, গাদিয়াড়া টুরিস্ট লজ, জলপাইগুড়ির মূর্তি ট্যুরিজম,জলদাপাড়া জঙ্গল, লাটাগুড়ি,চালশা, ঝারগ্রামের রাজবাড়ি, কালিম্পংয়ের লাভা,লোলেগাঁও,রিসোপ, কলকাতার কালীঘাট মন্দির, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সায়েন্স সিটি, ইকোপার্ক, নিকোপার্ক,বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, নন্দন, জোড়াসাঁকো, ধর্মতলা, মালদহের গৌড়,মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি, নদিয়ার মায়াপুর, নবদ্বীপ, উত্তর চব্বিশ পরগণার দক্ষিণেশ্বর মন্দির,টাকি,পূর্ব বর্ধমানের ১০৮ শিব মন্দির,পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা ও মন্দারমণি,পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বকখালি, গঙ্গাসাগর, কচুবেড়িয়া, ডায়মন্ডহারবার, রায়চক, উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ পার্ক-এই পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে মূলত এই শোরুম বা স্টল গুলি গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাইরে জেলার কোনও এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে থাকলে তালিকায় তা যোগ করতে জেলাশাসকদের বলা হয়েছে। স্থান চিহ্নিত করে সেটি কোথায় অবস্থিত, জমির মালিকানা, জমির পরিমাণ-সহ বিস্তারিত তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।